রায়দানের পরে মৃত ভবতোষ সাহার স্ত্রী ললিতাদেবী বলেন, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে লড়াই করে গেছি, এতদিনে সফল হয়েছি, ফাঁসি হলে বেশি আনন্দ পেতাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা— নয় বছর আগে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার অঙ্গার মনি গ্রামে মন্দিরের জায়গা কে কেন্দ্র করে ওই গ্রামের এক যুবক ভবতোষ সাহা কে কুপিয়ে খুন করা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। এই ঘটনায় ১৯ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এদের মধ্যে একজন আবার কলকাতা পুলিশের কর্মী এবং একজন আইনজীবী ও রয়েছেন। গতকাল চাঁচল মহকুমা আদালতে এই ১৯ জনের মধ্যে জীবিত ১৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ঘটনাক্রমে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুইজন এই মামলা চলাকালীন মারা যায়। রেবতী দাস বলে এক মহিলাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।আজ চাচল মহকুমা আদালতে এই খুনের ঘটনায় জড়িত চৌদ্দ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেনচাঁচল এডিজে কোর্টের অতিরিক্ত জেলা জজ সুরজিৎ দে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এবং ১৪৩ ধারা অনুযায়ী ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড অনাদায় এক বছরের জেল এর নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারক এদিন রায় দান করার সময় এই ঘটনাকে বর্বরোচিত ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।

এই রায়দানের পরে মৃত ভবতোষ সাহার স্ত্রী বলেন ললিতাদেবী বলেন, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে লড়াই করে গেছি। এতদিনে সফল হয়েছি। ওদের ফাঁসি হলে বেশি আনন্দ পেতাম। কিন্তু বিচারকের উপর আমরা কিছু বলতে পারি না।ওরা স্বামীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছিল। সেই ঘটনা ভুলতে পারি না। দিনরাত ওরা আমাকে হুমকি দিয়ে গেছে। এখন একটু শান্তিতে থাকতে পারবো।

মৃতের ভাই পূর্ণচন্দ্র সাহা বলেন সেদিন ঘটনার সময় আমিও দাদার সঙ্গে ছিলাম। আমার চোখের সামনেই দাদাকে ওরা কুপিয়ে খুন করেছে। আমি কোন রকমে পালিয়ে বেঁচে গিয়েছি। আজকে সাজা ঘোষণার পর দাদার আত্মার শান্তি পাবে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, আঙ্গারমনি গ্রামে একটি মন্দিরের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল। দুপক্ষই হিন্দু সম্প্রদায়ের। ঘটনার দিন ভবতোষ ও তার কাকাতো ভাই পূর্ণ সাহাকে কয়েকজন বাড়ি থেকে আলোচনায় বসার নাম করে ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু খানিক বাদেই রাস্তার উপরে তাদের ঘিরে মারধর শুরু হয়। পূর্ণ কোনও রকমে পালিয়ে যান। কিন্তু ভোবতোষকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। এদের মধ্যে দু’জন মামলা চলাকালীন মারা গিয়েছেন। সাক্ষপ্রমাণের অভাবে ছাডা় পেয়েছেন রেবতী দাস নামে এক মহিলা।

এ প্রসঙ্গে চাচোল কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর চিন্ময় মিশ্র বলেন আজ বিচারক দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১৬ জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন তার সঙ্গে সঙ্গে ছমাসের সশ্রম কারাদণ্ড তার সঙ্গে জরিমানা।। অনাদায় এক বছরের অতিরিক্ত জেল। বিচারক রায় দানের সময় এটিকে বর্বরোচিত ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে। ভবতোষের দেহে নয় খানা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। অভিযোগকারীরা ফাঁসির আবেদন করে। কিন্তু বিচারক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *