জলপাইগুড়ি বনবিভাগের অন্তর্গত মোরাঘাট রেঞ্জ লাগোয়া গ্রামগুলিতে হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে অকাল দীপাবলি পালন করা হচ্ছে।

 

জলপাইগুড়ি, নিজস্ব সংবাদদাতা:- জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি ব্লকের ঝাড় আলতা ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের গাড়খুটা গ্রাম। মূলত জঙ্গল থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ও কৃষি কাজ করেই এই এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা চলে। গোটা গ্রামের গা ঘেঁষে রয়েছে মোরাঘাট রেঞ্জের একদিকে সোনাখুলি ও অন্যদিকে খট্টিমারি বন জঙ্গল। আর এই বনজঙ্গল থেকে নিত্য নৈমিত্তিকভাবে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা লেগেই রয়েছে। চিতাবাঘ, বাইসন ,ভাল্লুক সচরাচর লোকালয়ে না এলো সন্ধ্যা নামতেই গোটা গ্রামের একমাত্র আতঙ্ক “এই বুঝি হাতি ঢুকে গেল”। আর হাতির লোকাল হয়ে চলে আসা একদিকে কৃষি জমি ফসল নষ্ট অন্যদিকে বসতবাড়ি র ভেঙে তছনছ করে দেওয়া, এই গ্রামের কাছে এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকাল হাতি আসতেই গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন টর্চের আলো চিৎকার চেঁচামেচি করে হাতিকে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু হাতি তো হাতিই সে নিজেও খেয়াল মত বাড়িতে মজুদ সমস্ত খাবার সাভার করে না দেওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই জঙ্গলে ফেরেনা। এদিকে যে পথ দিয়ে তার আনাগোনা পুরো কৃষি জমি নষ্ট। এ যেন “এক হাতি ও মানুষের খন্ড যুদ্ধ”। যার শেষ কোথায় তার উত্তর আজও অধরা।

তবে এবার গ্রামের মানুষ এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছে লোকালয় থেকে বনজঙ্গলে হাতিকে ফেরানোর। স্থানীয় মানুষজনের কথায়, গতবার যখন দীপাবলি উৎসব গ্রামে, সেই সময় প্রত্যেকটি বাড়িতে না হলেও বেশ কিছু বাড়িতে এলইডি টুনি বাল্ব জ্বালিয়ে দীপাবলীর রোশনাই তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। তখন লক্ষ্য করা গিয়েছে যে সমস্ত এলাকায় এই টুনি বাল্ব জ্বলছিল, তুলনামূলকভাবে সেই সমস্ত জায়গাতে হাতি আসেনি। আর সেই থেকে গোটা গ্রাম এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ গ্রামের বাড়ির চারিদিক নয়, নিজ নিজ কৃষি জমিতে ও টুনি বাল্ব জ্বালিয়ে দিয়েছে। যা দূর থেকে দেখলে মনে হবে, দীপাবলি পালন হচ্ছে এই গ্রামে। কোথায় আছে ভয়ের থেকে ভক্তির শ্রদ্ধার জন্ম নেয়। ধুপগুড়ি ব্লকের গারখুটা এই গ্রামটি বর্তমানে এভাবেই অকাল দীপাবলিতে মেতে উঠেছেন নিজের কৃষি জমি নিজেদের ফসল নিজেদের বসতবাড়ি বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *