হিলি, নিজস্ব সংবাদদাতা :- আজ ২৮ শে মে ২০২৫, সকাল ১০টায়, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল বরেণ্য ঐতিহাসিক অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকার মহাশয়ের ৯০ তম জন্মদিন পালন ও গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠান। অধ্যাপক সরকারের জন্মদিন ঘিরে বিরাট উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় হিলিতে। উপস্থিত অতিথিবর্গদের অধ্যাপক সরকার রচিত গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘THE GREAT INDIAN LUMINARY ATISA DIPANKARA SRIJNANA’ (“অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান : ভারতের এক মহান আলোকবর্তিকা”) প্রকাশিত হয় আজকের এই মহতী অনুষ্ঠানে। এই অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন ড. প্রণব ঘোষ, উপাচার্য, দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন ড. দীপক কুমার রায়, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়। আজকের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী বিপ্লব সাহা। অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকারের ৯০ তম জন্মদিনে তাঁর মুখে পায়েস তুলে দেন তাঁর সুযোগ্যা সহধর্মীনী শিক্ষিকা অঞ্জলি সরকার ও তার সুযোগ্যা কন্যা সঞ্চিতা সরকার ও সংহিতা সরকার এবং তাঁর বহু শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিবর্গ। অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকার মহাশয়ের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে রচিত ‘ইতিহাস অনুসন্ধান পরিষদে’র পক্ষ থেকে সূরজ দাশ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন এবং সূরজ দাশ রচিত স্বরচিত কবিতায় সুর দিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মাননীয় বিপ্লব সাহা মহাশয়। উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মধ্যে যারা বক্তব্য রাখেন, তাঁরা হলেন – ড. প্রণব ঘোষ, উপাচার্য, দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ড. দীপক কুমার রায়, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়, গৌতম দাস, প্রকাশক ও সম্পাদক পরম্পরা, কোলকাতা, রথীন ঘোষ ক্লিনিকাল সাইকোথেরাপিস্ট ও লেখক। এছাড়াও যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন, হরিপদ সাহা, বিশিষ্ট শিক্ষক, সমাজসেবী ও বালুরঘাট পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপিতা, অমিয় জানা, বিশিষ্ট সমাজসেবী, সুশান্ত দাস, বিশিষ্ট সমাজসেবী, স্বপন কুমার বিশ্বাস বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজসেবী, শীর্ষেন্দু দাস, ইন্সপেক্টর ইনচার্জ হিলি থানা, সৌমিত দাস প্রধান শিক্ষক নালন্দা বিদ্যাপীঠ বালুরঘাট, জয়ন্ত বর্মণ, চিত্রশিল্পী, ড. নবকুমার দাস, আহ্বায়ক, সম্পাদক, ইতিহাস অনুসন্ধান পরিষদ এবং সভাপতি, বালুরঘাট বি.এড. কলেজ (স্বায়ত্তশাসিত) প্রমুখ। অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘বর্তমানে মালদা জেলার ইংরেজবাজার থানার দক্ষিণাংশে আমরা দেখি যে গৌড় নগরীর ধ্বংসাবশেষ সেই নগরী নির্মিত হয়েছিল অনেক পরে মধ্যযুগে এবং তা ছিল না আদি গৌড় রাজ্যভুক্ত। সিদ্ধাচার্য শান্তরক্ষিতকে বলা হয়েছে গৌড়ের অধিবাসী আবার তিনি উল্লিখিত হয়েছেন সাহোরের রাজপরিবারের সন্তানরূপে। এখানে স্পষ্টরূপে ধরা যায় এই গৌড় হচ্ছে আদি গৌড় রাজ্য এবং চাঁচল থানার গৌড়হন্ড ও গৌড়সন্ড স্থানদ্বয় বহন করছে ঐ গৌড় রাজ্যের রাজধানী গৌড় নগরীর স্মৃতি। সাহোরের রাজপরিবারের উদ্ভবক্ষেত্র এই আদি গৌড় রাজ্যই। সেই সময়ে ঘটেনি মধ্যযুগীয় গৌড়ের উদ্ভব। আবার পাল রাজা ধর্মপাল ও মহাপণ্ডিত দীপংকর শ্রীজ্ঞানকেও বলা হয়েছে সাহোর রাজপরিবারসম্ভূত। এতে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে সাহোরকে কেন্দ্র করে ছিল একটি সামন্তরাজ্য। এই সামন্তরাজ্য সাহোরের রাজধানী ছিল সাহোর নামক নগরে। অধিকন্তু স্থানটি প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিল অনেক সিদ্ধাচার্যের জন্মভূমি ও কর্মভূমিরূপে। এখন প্রয়োজন এই সাহোর স্থানটির অবস্থান নির্ধারণ। এক্ষেত্রে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর থানায় আমরা পাচ্ছি সুরহর নামে একটি প্রাচীন গ্রাম। চিরামতী নদীর পশ্চিম তীরবর্তী এই গ্রামটি এখনও ধারণ করে আছে পাল আমলের বিশাল ধ্বংসাবশেষ’। অধ্যাপক সরকারের মতে প্রত্ন নিদর্শনে পূর্ণ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর ব্লকের এই সুরহর গ্রামটিই তিব্বতি সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে সাহোর নামে। দীপংকরের জন্মভূমি ধরতে হবে আদি গৌড় রাজ্যে। আবার বলা হয়েছে তিনি ছিলেন সাহোর বংশোদ্ভূত। আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি পাল রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল সম্ভবত প্রথমে ছিলেন সাহোরের (বর্তমান সুরহর) সামন্ত নায়ক এবং পরে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সমগ্র গৌড় রাজ্যের অধিপতি। এই অর্থে সাহোর রাজপরিবার এবং গৌড় রাজপরিবার একই পরিবার। সেক্ষেত্রে পাল রাজারা এবং শান্তরক্ষিত ও দীপংকর শ্রীজ্ঞান ছিলেন একই বৌদ্ধ পরিবারভুক্ত। পরিবেশন করেন শঙ্খপ্রিয়া সাহা ও বীরেন মাহাত। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সঞ্জয় কর্মকার।
অধ্যাপক হিমাংশু কুমার সরকার মহাশয়ের ৯০ তম জন্মদিন পালন ও গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠান ঘিরে বিরাট উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় হিলিতে।

Leave a Reply