বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবস: গুরুত্ব, উদ্‌যাপন ও প্রয়োজনীয়তা।

ভূমিকা:-  প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের মধ্যে মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি অন্যতম। এই দুটি সমস্যা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ১৭ জুন পালিত হয় ‘বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবস’ (World Day to Combat Desertification and Drought)। এই দিবসটি মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে এবং জনগণকে সচেতন করে।

দিবসটির ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা-

১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৭ জুন তারিখটি ‘বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তটি জাতিসংঘ কনভেনশন টু কমব্যাট মরুময়তা (UNCCD) এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।

দিবসটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

এই দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য হলো:

মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

জনগণকে এই সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করা এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

জাতিসংঘ কনভেনশন টু কমব্যাট মরুময়তা (UNCCD) এর কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা।

মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব:-

মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যাগুলোর ফলে:

কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

পানি সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মানব জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।

জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, যা দারিদ্র্য বৃদ্ধি করছে।

 

দিবসটির গুরুত্ব

এই দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে:

জনগণকে মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জল সংরক্ষণ কৌশল প্রচার করা হয়।

পরিবেশগত শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়।

 

উদ্‌যাপনের পদ্ধতি ও কার্যক্রম

বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবসটি বিভিন্নভাবে উদ্‌যাপন করা হয়:

সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করা হয়, যেখানে বিশেষজ্ঞরা মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেন।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালানো হয়, যা মাটি সংরক্ষণ ও পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক।

স্থানীয় সম্প্রদায়কে টেকসই কৃষি ও জল ব্যবস্থাপনা কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার করা হয়।

 

ভারতের প্রেক্ষাপটে মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি

ভারতও মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশ মরুময় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলে:

কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

পানি সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 

সমাধান ও পদক্ষেপ

মরুময়তা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব মোকাবিলায় কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগ করা।

জল সংরক্ষণ ও পুনঃব্যবহার কৌশল উন্নয়ন করা।

বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন কার্যক্রম বৃদ্ধি করা।

স্থানীয় সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা প্রদান করা।

সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।

 

উপসংহার

বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি মোকাবিলা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এই দিবসটি আমাদের সচেতন করে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা, জল সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *