🔥 “অগ্নিযুগের নির্ভীক বীর শহীদ কানাইলাল ভট্টাচার্য : নামহীন পরিচয়হীন এক বিপ্লবীর বিস্মৃত গাথা” 🔥

“ধ্বংস হও! দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও” — এই এক খণ্ড কাগজ, এই একটিমাত্র বাক্য, চিরকাল ইতিহাসের পাতায় অমর করে রেখে গেল এক নামহীন, নির্ভীক শহীদের নাম — বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য।

🔴 পরিচিতি: অগ্নিযুগের বলিপ্রদত্ত বিপ্লবী

ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন কানাইলাল ভট্টাচার্য (জন্ম: ২৭ জুলাই ১৯০৯ – মৃত্যু: ২৭ জুলাই ১৯৩১)। মাত্র ২২ বছর বয়সেই দেশের জন্য আত্মাহুতি দেন এই বীর বিপ্লবী। তিনি ছিলেন বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের সক্রিয় সদস্য ও বিপ্লবী নেতা সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি সহচর।

🔵 জন্ম ও শৈশব:

জন্মস্থান: মজিলপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
পিতা: নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
মাতা: কাত্যায়নী দেবী
চার ভাইয়ের মধ্যে কানাইলাল ছিলেন সেজো। দাদার সঙ্গে কলকাতায় থেকে ইলেকট্রিকের কাজ শেখার পাশাপাশি তিনি দোকানেও বসতেন, সেখানেই বিপ্লবী বই পড়ে দেশপ্রেমের বীজ মনের গভীরে গেঁথে যায়।

🔵 বিপ্লবী জীবনের শুরু:

১৯৩১ সালে জয়পুর মজিলপুর ব্যায়াম সমিতির অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আগমনে উদ্দীপ্ত হয়ে পড়েন কানাইলাল। সেদিন প্ল্যাটুন কমান্ডার হিসেবে অভ্যর্থনা কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পরই তিনি বিপ্লবী মন্মথ ঘোষ ও সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন।

🔴 গার্লিক হত্যাকাণ্ড: আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়

দীনেশ গুপ্ত ও রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসি প্রদানকারী বিচারক আর আর গার্লিককে হত্যার দায় নিজের কাঁধে নেন কানাইলাল, বিমল দাশগুপ্ত ছদ্মনামে।
২৭ জুলাই ১৯৩১, বিচারক গার্লিককে গুলি করে হত্যা করার পর নিজে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ গুলি চালিয়ে তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয়।

তার পকেটে পাওয়া যায় সেই বিখ্যাত চিরকুট—

“ধ্বংস হও, দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও — ইতি, বিমল গুপ্ত”

এই আত্মাহুতি বিমল দাশগুপ্তকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ছিল। পুলিশ বহুদিন পর্যন্ত তাঁর আসল পরিচয় জানতে পারেনি। এমনকি তাঁর মা কাত্যায়নী দেবী পর্যন্ত শনাক্ত করতে অস্বীকার করেন —

“এ আমার কানু নয়।”

🔵 শেষ প্রস্তুতি ও আত্মোৎসর্গ:

হত্যাকাণ্ডের আগের দিনই কসবা থেকে টপসিয়ায় এসে জঙ্গলের মধ্যে টার্গেট প্র্যাকটিস করেন বিপ্লবী কানাইলাল। সদ্য টাইফয়েড কাটিয়ে উঠেও ছিলেন অটল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিপ্লবের জন্য মৃত্যু বরণ করাও তাঁর কাছে গৌরবের বিষয় ছিল।

🟢 সম্মান ও স্মৃতিরক্ষায় উদ্যোগ:

আলিপুরের বেকার রোড আজ তাঁর নামেই: “বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য সড়ক“
মজিলপুরের এক রাস্তাও তাঁর নামে নামাঙ্কিত
তাঁর পৈতৃক বাড়ির সামনে ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে

🔵 বিস্মৃতপ্রায় এক মহাবীর:

আজকের দিনে দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের মাঝে কানাইলাল ভট্টাচার্যের নাম অনেকটাই হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির পলিতে। অথচ তাঁর আত্মোৎসর্গের ঘটনা, অপর একজন বিপ্লবীর প্রাণ বাঁচাতে নিজের পরিচয় বিসর্জন, ইতিহাসে বিরল এক দৃষ্টান্ত।

🔴 উপসংহার:

“শহীদ কানাইলাল ভট্টাচার্য” শুধুমাত্র এক নাম নয় — তিনি এক প্রতীক। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য আত্মাহুতির এক অমর প্রতিমা।
আজ তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিনে, শ্রদ্ধা জানাই সেই নির্ভীক বীরকে যিনি নাম-পরিচয় ত্যাগ করে স্বাধীনতার অগ্নিপথে নিঃশব্দে রেখে গেলেন নিজের চিহ্ন।

📚 তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
🕯️ শ্রদ্ধাঞ্জলি — “জয়তু বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য”