নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা—একসময় মহাত্মা গান্ধির সহযোদ্ধা ছিলেন তিনি ৷ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন ৷ স্বাধীনতার আগে তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম আদিবাসী বিধায়কও ৷ তাঁর নাম হয়তো অনেকেই জানেন না ৷ তিনি বীর বীরসা ওরাওঁ। তিনি প্রয়াত হয়েছেন বহুকাল আগে। আজ কোনোরকমে বেঁচেবর্তে রয়েছেন এমন একজন মানুষের উত্তরসূরীরা। অভিযোগ, একসময় সরকারের তরফে তাঁদের কিছুটা কৃষিজমির পাট্টা দেওয়া হলেও এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূলীরা সেই জমি দখল করে নিয়েছে৷ স্যাঁতস্যাঁতে ঘর, উপরে শতচ্ছিদ্র চালা, বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরটা কাদায় মাখামাখি৷ এই দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটালেও বীরসা ওরাওঁয়ের উত্তরসূরীরা তেমন কোনও সরকারি সাহায্য পান না ৷ জরাজীর্ণ বাড়ি থাকলেও তাঁদের নাম সরকারি ঘরের তালিকায় ওঠেনি৷ শনিবার।বীরসা ওরাওঁয়ের পরিবারের এমনই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন স্থানীয় থানার আইসি৷ সবকিছু শুনে দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়ে গেলেন তিনি৷ প্রয়াত বীর বীরসা ওরাওঁয়ের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার তেঁতুলবাড়ি গ্রামে৷ এখন ওই বাড়িতে থাকেন তাঁর নাতবউ এবং তাঁর পরিবার৷ অপুষ্টির চিহ্ন সবার শরীরে৷ সবাই দিনমজুরি করেন৷ যা আয় হয় তাতে সবার দু’বেলা পেট ভরে না৷ সরকারি সাহায্য বলতে শুধু মাসিক হাজার টাকা। এদিন এই পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি মনোজিৎ সরকার ৷ পরিস্থিতি দেখে নিজের পকেট থেকে তিনি পরিবারটিকে কিছু আর্থিক সাহায্য করেন৷ বীরসা ওরাওঁয়ের নাতবউ সুমিয়া ওরাওঁ বলেন, “আমার দাদাশ্বশুর দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াই করেছিল৷ প্রথম বিধায়কও ছিল৷ স্বাধীনতার লড়াই জেতার পর তাঁর কী হয়েছিল আমার জানা নেই৷ আমরা এখন খুব সমস্যায় আছি৷ সরকারের কাছ থেকে কিছু পাইনি ৷ টাকা-পয়সা, ঘর-বাড়ি কিছু না। তবে সরকার আমাদের পাট্টার জমি দিয়েছিল৷ যদিও ওই জমি তৃণমূলের লোকজন দখল করে নিয়েছে। আমরা এখন প্রায় না-খেয়ে থাকছি। আমার দাদু দেশের জন্য লড়াই করেছিল। তারপরেও কেউ আমাদের কিছু দেয়নি৷ আজ থানার আইসি এসেছিলেন। সাহায্য করেছেন৷ আমি তাঁকে সব ঘটনা জানিয়েছি। জমি দখলের কথাও। তিনি আমাকে বলেছেন, প্রয়োজন পড়লে আমরা যেন তাঁকে ফোন করি ৷”
বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাতবউদের পাশে দাঁড়ালেন থানার আইসি মনোজিৎ সরকার।

Leave a Reply