শিশু সুরক্ষায় আইন, সচেতনতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতাই মূল— বালুরঘাটে বিশেষ আলোচনাসভা।

বালুরঘাট, নিজস্ব সংবাদদাতা:- বালুরঘাট ল’ কলেজ, শক্তি বাহিনী ও বাপু যৌথভাবে এবং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি (DLSA) ও ডিস্ট্রিক্ট সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিস (DSWO), দক্ষিণ দিনাজপুর-এর সহযোগিতায় আজ বালুরঘাট ল’ কলেজে বাল্যবিবাহ, শিশু যৌন নির্যাতন ও শিশু পাচার বিরোধী এক বিশেষ সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়। কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এই সভায় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রায় ৪৫০ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় মানস বসু, জেলা জজ ও চেয়ারপারসন, ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি দক্ষিণ দিনাজপুর। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন কেয়া বালা, সেক্রেটারি, DLSA দক্ষিণ দিনাজপুর; ড. সুমিত কুমার তিওয়ারি, টিচার-ইন-চার্জ, বালুরঘাট ল’ কলেজ; ভাবনা শর্মা, AHTU হিলি BOP; মিজানুর রহমান, জেলা কো-অর্ডিনেটর, শক্তি বাহিনী দক্ষিণ দিনাজপুর; এবং PCDC দক্ষিণ দিনাজপুর-এর প্রতিনিধিরা।

সভায় মাননীয় মানস বসু তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বাল্যবিবাহ, শিশু যৌন নির্যাতন কিংবা মানবপাচার— প্রতিটি অপরাধই সমাজের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। শুধুমাত্র আইন নয়, সচেতনতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমে আমরা এই অপরাধগুলো প্রতিরোধ করতে পারি। ছাত্রছাত্রীরাই সমাজ পরিবর্তনের মূল শক্তি।” তিনি আরও সকলকে সন্দেহজনক ঘটনা দেখলে প্রশাসনকে অবহিত করার আহ্বান জানান।

কেয়া বালা তাঁর বক্তব্যে পকসো আইনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “নির্যাতনের ঘটনা লুকিয়ে রাখলে অপরাধীর সাহস বাড়ে। তাই প্রত্যেক ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারকে দ্রুত আইনি সাহায্য নেওয়া এবং অন্যদেরও সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি।”

ড. সুমিত কুমার তিওয়ারি বলেন, “শিক্ষা কেবল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এগিয়ে আসাই একজন প্রকৃত শিক্ষার্থীর পরিচয়।” তিনি ভবিষ্যতেও আরও সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজনের কথা জানান।

ভাবনা শর্মা মানুষের পাচারের আধুনিক রূপ সম্পর্কে আলোকপাত করে বলেন, “মানবপাচারকারীরা এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তাই সতর্ক থাকা এবং যেকোনো সন্দেহজনক পরিস্থিতি পুলিশকে জানানোই একমাত্র উপায়।”

মিজানুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “শিশু সুরক্ষার জন্য সরকারি সংস্থা, এনজিও এবং সমাজ— তিন পক্ষের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শক্তি বাহিনী জেলার প্রতিটি গ্রামে-গ্রামে সচেতনতা ছড়িয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।”

PCDC-এর প্রতিনিধি জানান, “প্রতিটি শিশু নিরাপদ শৈশব পাওয়ার অধিকার রাখে। পরিবার ও সমাজকে সঙ্গে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

সভায় বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব, পকসো আইনের বিভিন্ন দিক, মানবপাচারের পদ্ধতি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। শেষে ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করে আইনি সহায়তা, অভিযোগ জানানোর পদ্ধতি এবং সরকারি সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন।

অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকরা জানান, আগামী দিনে জেলার অন্যান্য কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এ ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বিস্তৃতভাবে পরিচালিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *