মায়ের কাঁধে সংসার ও বিশেষ সন্তানের বোঝা— সরকারি সুবিধা না পেয়ে দিশাহারা জ্যোতিষ মুর্মু পরিবার।

দক্ষিণ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- মাত্র একত্রিশ বছরের জ্যোতিষ মুর্মু জন্ম থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম। মৃগী রোগ, চলাফেরায় সমস্যা, কথা বলতে না পারা—সব মিলিয়ে সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল মায়ের ওপর। অথচ আজও হয়নি তাঁর প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গ কার্ড। ফলে কোনো সরকারি আর্থিক সহায়তা বা সুযোগ-সুবিধা পাননি তিনি। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের জাখিরপুর পঞ্চায়েতের মধ্য বলতা আদিবাসী পাড়ায় এই তরুণের জীবন জুড়ে রয়েছে বঞ্চনা ও দীর্ঘদিনের অবহেলা।

জ্যোতিষের মা মেলচো টুডু একজন বিধবা কৃষিশ্রমিক। পনেরো বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। দিনে মজুরি মিললে তবেই চলে সংসার ও ছেলের দেখভাল। চোখে জল এনে মেলচো বলেন, “জন্ম থেকেই এমন। মৃগী আছে, মাথাতেও সমস্যা। না ধরলে হাঁটতে পারে না। হাত চলে না, কথা বলতেও পারে না।” তবু এত কষ্টের মধ্যেও সরকারি কোনো পরিষেবা বা সঠিক নির্দেশনা তাদের কাছে কখনো পৌঁছয়নি।

স্থানীয়রা অফ ক্যামেরার সামনে জানাচ্ছেন, ভোটের সময়ে রাজনৈতিক কর্মীরা তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে ভোটদান করালেও ভোট মিটতেই আর কোনো খোঁজ নেন না। এ যেন ব্যবহার—সাহায্য নয়। প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ ক্যাম্পের খবরও তাদের পরিবার পর্যন্ত পৌঁছায় না, তাই বহু বছর ধরেই জ্যোতিষ বঞ্চিত থাকছে সব সরকারি সুবিধা থেকে।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য এনামুল মন্ডল কুমারগঞ্জে অনুপস্থিত থাকায় মোবাইলে জানান, “আমরা ওদের অনেকবার বলেছি ক্যাম্পে যেতে, কিন্তু ওরা যায়নি। এবারে আমি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে ওদের ক্যাম্পে নিয়ে যাব।” তাঁর এই আশ্বাস সামান্য হলেও আশা জাগায় পরিবারের মনে।

প্রশাসনিক উদাসীনতা, রাজনৈতিক অবহেলা ও দীর্ঘদিনের অনাগ্রহ মিলিয়ে জ্যোতিষের ভবিষ্যৎ আজও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে আটকে। তবে পঞ্চায়েতের সাম্প্রতিক উদ্যোগ সত্যিই বাস্তবায়িত হলে হয়তো দীর্ঘ বঞ্চনার অবসান ঘটতে পারে এই বিশেষভাবে সক্ষম তরুণের জীবনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *