পূর্ব বর্ধমান, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীঃ রাত পেরোলেই মহালয়া। যতই মোবাইল বা টিভি আসুক না কেন রেডিও ছাড়া কি মহালয়া হয়। আশ্বিন মাস এলেই বাড়িতে থাকা রেডিও গুরুত্ব বেরে যায়। মহালয়ার ভোড়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে “যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরুপেন সংস্থিতা” মন্ত্রোচ্চারণ ভালো ভাবে শুনতে শেষ মুহুর্তে রেডিও সারাই জন্য লাইন পরে যেত দোকানে। মহালয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকার কান থাকতো রেডিও তে, দোকানে বসে এমনই সব কথা স্মৃতিচারণ করলেন বর্ধমান শহরের পুরাতন রেডিও মিস্ত্রি নিমাইচন্দ্র মোদক। তিনি বলেন, এখন সারা বছর সেরকম রেডিও সারাইয়ের জন্য না এলেও মহালয়ার এক মাস আগে থেকে রেডিও সারাইয়ের খুব চাপ থাকে। বর্ধমান শহর থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখনও পর্যন্ত আসেন তার কাছে রেডিও সারাইয়ের জন্য। কারণ, প্রায় ৫০-৬০ বছর ধরে বর্ধমান শহরের দত্ত-সেন্টারের গলির ছোট্ট দোকানে রেডিও সারাইয়ের কাজ করে যাচ্ছেন নিমাই বাব। এবারেও ছোট্ট দোকানে বসে দুশোর বেশি রেডিও সারাইয় করে ফেলেছেন। রেডিও সারাইয়ের জন্য আসা ষাটোর্ধ গোপালচন্দ্র দাস বলেন, রেডিওতে মহালয়া শোনার রেওয়াজ এখনও রয়েগেছে। এখনও মহালয়ার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মন্ত্রোচ্চারণ শুনতে ভোড় ভোড় উঠে পরি। রেডিও তে মহালয়া শুনলে পূজো পূজো অনুভূতি টা এখন হয়। আজকের সময় মোবাইল উঠলেও রেডিও তে মহালয়া শোনাটাই আলাদা অনুভূতি। শহরের অনেক প্রবীন এখন মনে করেন, মোবাইলে ফেসবুক বা ইউটিউব যতই দাপট দেখাক, মহালয়ার ভোড়ে রেডিওর জুড়ি মেলা ভার। সেই কারণে এখনও বর্ধমান শহরের দত্ত-সেন্টারে রেডিও দোকান খুলে অপেক্ষা করেন নিমাইচন্দ্র মোদক। সারা বছর রেডিও সারাইয়ের তেমন কোন কাজ না থাকলেও মহালয়ার ভোড়ের আবেদ কে জিইয়ে রাখতে এখনও দোকান খুলে অপেক্ষা করেন। পঞ্চাশ দশকের বেশী সময় ধরে রেডিও সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক।