পুরুলিয়া, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- কিছু মানুষের আবেগ নিয়ে তৈরী হয় এক একটি সংস্থা। সগুলি প্রথম এক-দু বছর ঠিক ঠাক কাজ করলেও সময়ের সাথে সাথে সেই উদ্যম যায় হারিয়ে। পরে বিলুপ্তির পথে চলে যায় সংস্থা গুলির বেশির ভাগ। তবু তার মধ্যে কিছু সংস্থা থাকে যেগুলি নানাবিধ বাধা বাধা বিপত্তি পেরিয়েও থাকে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এরকমই জেলা পুরুলিয়ার একটি জনপ্রিয় সামাজিক সংস্থা হলো উত্তরায়ণ এক নতুন দিশা। এবার তারা ছয় পেরিয়ে দিল সাতে পা। গত ২৬ শে নভেম্বর ছিল তার বর্ষপূর্তি উদযাপন পুরুলিয়া জেলা পরিষদ মিটিং হলে। সারা বাংলা থেকে আগনিত কবি-সাহিত্যিক সমাজসেবী ছিলেন আমন্ত্রিত। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পুরুলিয়া জেলার জেলা সভাধিপতি মাননীয়া নিবেদিতা মাহাত মহাশয়া। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন পুরুলিয়া মিউনিসিপালিটির পৌরপ্রধান মাননীয় নব্যেন্দু মাহালী মহাশয়। তাঁরা দুজনই উত্তরায়ণের ভূয়সী প্রশংসা করে সদা সর্বদা উত্তরায়নের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন সুদূর কলকাতা থেকে সাহিত্যিক অর্ণব সান্যাল, ড. দ্যুতি দত্তগুপ্ত ; আসানসোল থেকে অপর্না দেওঘরিয়া; দাঁতন থেকে উৎসাহী দাস। তারাও উত্তরায়নের এই আয়োজনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও সংস্থার সভাপতি ড. শ্রীনিবাস মিশ্র সহ উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুনীল মাহাত, কলেন্দ্রনাথ মান্ডি, ভাস্কর বাগচি, বাঁকুড়া থেকে পার্বতী রায়, হরিপদ মাহাত, রঘুনাথ পুর থেকে দেবাশিস সরখেল, কাশীপুর থেকে চঞ্চল দুবে, মানবাজার থেকে পার্থসারথী মহাপাত্র, আড়ষা থেকে নরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত সহ প্রায় ৭০ জন কবি-সাহিত্যিক। সংস্থার সম্পাদক তথা কর্ণধার ড. ব্রতীন দেওঘরিয়া জানান এদিন তাদের সাহিত্য বিভাগ থেকে হাড়াই পত্রিকার চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশের পাশাপাশি হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘অন্তরীক্ষের অদ্বিতীয় সম্বোধন’, হরিপদ মাহাতোর টুসুগানের বই ‘মন টানে টুসু গানে’ আর ড. ব্রতীন দেওঘরিয়া সম্পাদিত ‘পুরুল্যার পাইল পার্বন’ নামে আরও তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হয় ‘ছাতিম’ এর নভেম্বর সংখ্যা। মঞ্চটি তারা বিপ্লবী ঁঅরুণ চন্দ্র ঘোষ মহাশয়ের নামে উৎসর্গ করেন, সেই সম্পর্কে আলোকপাত করেন চ্যালিয়ামার বিশিষ্ট গবেষক ড. সুভাষ রায় ; পত্র-পত্রিকার অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করেন অপর এক বিশিষ্ট গবেষক জলধর কর্মকার। শ্রুতিনাটক মঞ্চস্থ করেন দিব্যেন্দু শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় ও শম্পা পাত্র চট্টরাজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন জন্মেজয় চ্যাটার্জি ও মৌসুমী দেওঘরিয়া। এছাড়াও ক্ষুদে নৃত্য শিল্পী ঋষিকা দেওঘরিয়া, অয়ন্তিকা সিংহ রায়, সঙ্গীত শিল্পী সোনালী পাত্রের পাশাপাশি শহর পুরুলিয়ার বীণা শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষাকেন্দ্র, তানিস্ক ডান্স একাডেমি, কৃষ্ণকলি ডান্স একাডেমি, নৃত্যাঞ্জলি, সুর তাল সঙ্গীত সংস্থার ছেলে মেয়েদের নাচ-গানের মধ্য দিয়ে সুন্দর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অতিক্রান্ত হয়। সব মিলে যত দিন যাচ্ছে উত্তরায়ণের শিকড় সারা বাংলার আনাচে কানাচে গ্রোথিত হচ্ছে। এইসবই সম্ভব হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা ও সহযোগিতার জন্য৷ ব্রতীন বাবুর মতে তারা মানুষের জন্য, শিল্পের জন্য, সাহিত্যের জন্য নিবেদিত প্রান। আর মানুষের অগনিত ভালোবাসা পেয়ে তারা উৎসাহিত ও আনন্দিত। উত্তরায়ণ এক নতুন দিশার ছয় পেরিয়া সাতে পা এর মিলন মেলায় চাঁদের হাটে যেমন বসেছিল, তেমনই খুশির হাওয়া এনে দিয়েছিল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক মহলে।