১৬১২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ নৌশাখা ‘রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি’ গঠন করে৷ স্বাধীনতার পর, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সেই বাহিনীর নাম পালটে রাখা হয় ভারতীয় নৌবাহিনী৷ ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় প্রথমবার ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তানের উপকূলে প্রবেশ করে সরাসরি যুদ্ধ করে। করাচি বন্দরে প্রথমবার অ্যান্টিশিপ মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করে পাকিস্তানের একাধিক জাহাজ। এই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন ট্রাইডেন্ট।
একাত্তরের যুদ্ধে, ভারতীয় নৌবাহিনী বেছে বেছে পাকিস্তানের তেলের খনি, ট্যাঙ্কারগুলিকে ধ্বংস করে৷ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বা রণতরী থেকে মিসাইল ছুঁড়ে, অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে ওই যুদ্ধে পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করেছিল ভারত৷ সে সময় ওরকম ‘অল-আউট অ্যাটাক’-এর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা মুখের কথা ছিল না৷ কিন্তু সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিলেন নৌসেনা বাহিনীর সদস্যরা৷
এই অভিযানে ছিল ভারতীয় নৌসেনার তরফে তিনটি যুদ্ধ জাহাজ। আইএনএস নিপাত, আইএনএস নির্ঘাত এবং আইএনএস বীর। এই তিন যুদ্ধ জাহাজ গুজরাটের ওখা বন্দর থেকে রওনা হয় পাকিস্তানের করাচি বন্দরকে লক্ষ্য করে। রাতের মধ্যে করাচি উপকূল থেকে ৭০ মাইল দূরে পৌঁছায় ভারতের এই তিন যুদ্ধ জাহাজ। মুহূর্তের মধ্যে অ্যান্টিশিপ মিশাইল দিয়ে ধ্বংস করে পাকিস্তানের পিএনএস খাইবার। পাশাপাশি ধ্বংস করে আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ।
এই বিশেষ অভিযানের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী সম্মানিত করে জয়ী যুদ্ধ জাহাজের সকল সেনা ও আধিকারিকদের। এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করেই প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর পালিত হয় নৌসেনা দিবস।
উল্লেখ্য, গোটা বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের নৌবাহিনীর ‘ন্যাভাল এরোব্যাটিক টিম’ রয়েছে৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘সাগর পবন’ তাদের মধ্যে একটি৷
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিরাট হল ভারতের প্রথম রণতরী৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর দ্বিতীয় রণতরীর নাম আইএনএস বিক্রমাদিত্য৷ আইএনএস বিক্রান্ত এ দেশে তৈরি প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার৷
ভারতীয় রণতরীগুলিকে নেতৃত্ব দেয় ৬ হাজার টনের নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত৷ রাষ্ট্রসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ ব্যতীত একমাত্র ভারতের কাছেই এরকম একটি ডুবোজাহাজ রয়েছে৷
প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর নৌবাহিনী তার প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করে।১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে নৌবাহিনীর হামলার স্মরণে এই প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়। এই বছর প্রথমবারের মতো, ৪ ডিসেম্বর (রবিবার) রাজধানী দিল্লির বাইরে বিশাখাপত্তনমে নৌবাহিনী দিবস পালিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে নৌবাহিনীর সকল কর্মকর্তা ওয়ার মেমোরিয়ালে গিয়ে শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নৌসেনা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সহ সকল বিশিষ্টজনেরা নৌবাহিনীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।