আজ জাতীয় কিষাণ দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং তার গুরুত্ব।

0
402

কৃষকদের সম্মান জানাতে এবং তাঁদের কাজ সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য মূলত আজকের এই দিনটি পালন করা হয়। আজ দেশের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিং এর জন্মদিন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দেশের কৃষকদের জন্য একাধিক কাজ করেছেন।

চৌধুরী চরণ সিংহের মতে কৃষিকাজ চিরস্থায়ী করতে হলে কৃষিজমির মালিকানা কৃষকদের হওয়া প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি এমন একটি স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরী করতে চেয়েছিলেন যেখানে কৃষিজমির মালিকানা কৃষকদেরই থাকে। স্বাধীনতার পরেই অধিকাংশ ভারতীয় নাগরিকের জীবিকা ছিল কৃষিকাজ কেন্দ্রিক।  কৃষক সুবিধার জন্য একাধিক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আমলে কৃষকদের দিকটাও একই ভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। কৃষকদের জন্য বানিয়েছিলেন একাধিক প্রকল্প। তার আগে ১৯৫২ সালে কৃষি মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি কৃষিক্ষেত্রে জমিদারি প্রথা বিলোপ করেন। সেই সময় ১৯৫২ সালে ‘জমিদারি প্রথার বিলুপ্তীকরণ বিল’ (Abolition of Zamindari Bill 1952) প্রণয়নে তাঁর কঠোর পরিশ্রমের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ১৯৫৩ সালে এই সংক্রান্ত একটি আইনও পাশ হয়। এরফলে কৃষক দিবস হিসেবে তাৎপর্য আরও বেড়ে যায়। তাঁর আমলেই ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (National Bank of Agriculture and Rural Development– NABARD) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতের নানা সামাজিক সমস্যা বিষয়ক বই লিখেছিলেন চৌধুরী চরণ সিংহ। কৃষিজমি, জমিদারি প্রথা, দারিদ্র্য, কৃষিজমির স্বত্বাধিকার প্রভৃতি বিষয়গুলি বারবার তাঁর লেখায় উঠে এসেছে।

২০০১ সাল থেকে আজকের দিনটিকে অর্থাৎ চৌধুরি চরণ সিংয়ের জন্মদিনটিকে কৃষক দিবস বা কিষাণ দিবস হিসেবে পালনের কথা ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময় থেকে আজকের দিনটিকে কৃষক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে দেশে। প্রত্যেকটা দিনই কৃষকরা কাজ করেন। মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার তাগিদে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করে থাকেন কৃষকরা। রীতিমতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। এক্ষেত্রে সবজি বা ফসল তাঁদের কাছে নিজের সন্তানের মতো। এবিষয়ে আরও বলা হয়েছে,ইন্ডিয়ান ডিশ থেকে ওয়েস্টার্ন বা কনটিনেন্টাল, আমরা যা-ই খেয়ে থাকি না কেন, তার মূল ভিত হল আমাদের কৃষকরা। এ জন্যই আমরা ভালো–মন্দ খেতে পারি।

আমাদের অন্নের জোগাড় করার লক্ষ্যেই অনেক সময় তাঁদের দু’‌মুঠো ভাতও খাওয়া হয় না। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে কারো কারো। তবুও তাঁরা নিরন্তর পরিশ্রম করেন। সামান্য অর্থের বিনিময়ে যাঁরা আমাদের এত বড়, সব চেয়ে মূল্যবান পরিষেবা দিয়ে থাকেন, তাঁদের অনেক সময়েই অবহেলায় থাকতে হয়। কৃষক বা চাষির ঘরের ছেলে-মেয়েরা আর পাঁচটা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবারের মতো বড় হয় না। কোনো রকমে দিন গুজরান করে চলে যায়। কিন্তু তাদের জন্যই আমর পেট ভোরে খেতে পাই। আমাদের ক্ষুধা নিবৃত্তি হয়।

কৃষকরা দেশের মেরুদণ্ড,একথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তাঁরা না ফসল ফলালে দেশ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছাতো না। স্বল্প অর্থের বিনিময়ে তাঁরা পরিষেবা দিয়ে থাকেন। অনেক সময়েই তাঁদের অবহেলার মধ্যে থাকতে হয়।কৃষিকে ভারতের প্রাথমিক পেশা, আমাদের দেশ কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে এখনও এটি সবচেয়ে অবমূল্যায়ন পেশা হিসাবে বিবেচিত হয়। যে কোনও দেশের জন্য, কৃষি কেবলমাত্র বাক্যে নয়, বাস্তবেও তার মেরুদণ্ড।যে কৃষকরা আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে জীবনধারণে সহায়তা করে থাকেন, এই দিনটিতে সমগ্র জাতি তাদের প্রতি প্রাণ দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।  সেই কৃষকদের আজ ধন্যবাদজ্ঞাপন করার দিন। এইধরনের অনুষ্ঠানগুলি আয়োজনের মাধ্যমে সময় ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে কৃষিজমি ও কৃষিজাত পণ্যের গুণগত মান ও উৎপাদন বৃদ্ধির নানা উপায়গুলি কৃষকদের জানানো হয়। পাশাপাশি তাঁদের প্রাপ্য অধিকার ও সুবিধাগুলি সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করে তোলার প্রয়াস করা হয়। অপরদিকে কৃষকদের অবদান এবং অবস্থান বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা এই অনুষ্ঠানগুলি উদযাপনের অন্যতম লক্ষ্য। ভবিষ্যতে সমগ্র দেশের কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই এই দিনটি উদযাপন সার্থক হয়ে উঠতে পারে।  এই কারণেই প্রতিবছর ২৩ শে ডিসেম্বর সারাদেশে কৃষক দিবস অত্যন্ত উদ্দীপনার সাথে পালন করা হয়।  দিনটি গোটা দেশে পালিত হয়ে থাকে জাতীয় কৃষক দিবস হিসাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here