আজ বিশ্ব জলাভূমি দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।

জলবায়ু পরিবর্তন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, অপরিমিত নগরায়ণ, বিষাক্ত বর্জ্যপদার্থ নানাবিধ কারণে জলের ভূমির ভারসাম্য হারাচ্ছে ভয়াবহ ভাবে।গত একশো বছরে আমাদের জলের ব্যবহার ছয়গুণ বেড়েছে, অন্যদিকে পৃথিবীর বুক থেকে অনেক বড় বড় জলাশয় বা জলাভূমি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যে কোনো দেশের প্রধান জলাভূমিকে মনুষ্যদেহের কিডনির সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিডনি বিকল হলে যেমন মানবদেহ অচল হয়ে যায় তেমনই জলাভূমি ঠিকমতো সংরক্ষণ না হলে পরিবেশের ভারসাম্য শুধু নষ্ট হবে না, বিপর্যয় ডেকে আনবে।

আজ ‘ওয়ার্ল্ড ওয়েটল্যান্ড ডে’। বিশ্ব জলাভূমি দিবস। বিশ্ব জলাভূমি দিবস ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে সাংবার্ষিক আকারে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে। জলাভূমি সংক্রান্ত সম্মেলনে সাক্ষর গ্রহণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই এ দিবস পালন। ১৯৭১ সালের এ দিনে কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী ইরানের রামসার শহরে জলাভূমি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে জলাভূমির আন্তর্জাতিক উপযোগিতার কথা তুলে ধরা হয়েছিল।

১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী এ দিবস উদযাপিত হয়েছিল এবং শুরু থেকেই দিবসটিকে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় ভরিিতেও এ দিবস পালন করা হয়ে থাকে।

এ দিবস উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি দপ্তর, বেসরকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন স্তরের নাগরিকগণ জলাভূমির উপযোগিতা ও সুবিধার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি রামসার কনভেনশনের কথাও তুলে ধরেন।

১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কনভেনশনের ওয়েবসাইটে ৯৫টিরও অধিক দেশে গৃহীত বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আলোচনা সভা, সেমিনার, প্রকৃতিতে হাটা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নৌকাবাইচ, নগর পরিচ্ছন্নকরণ ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। রেডিও, টেলিভিশনে বিশেষ সাক্ষাৎকার ও অনুষ্ঠান প্রচার, দৈনিকগুলোয় ক্রোড়পত্র, নতুন জলাভূমি নীতিমালা প্রকাশ, নতুন রামসার এলাকা নির্ধারণ, জাতীয় পর্যায়ের নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ এ দিবসের অন্যতম অনুষঙ্গ। রামসার সহযোগিতা নিয়ে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সালে কোরিয়ায় বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হয়েছিল।

সারা পৃথিবী যখন বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে লড়াই করছে তখন আমাদেরও দায়িত্ব জলাভূমিগুলোকে রক্ষা করা। পরিবেশকে বাঁচাতে জলাভূমিগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দরকার। কারণ এমন বহু জলাভূমি রয়েছে আমাদের দেশে যা বহু পশু-পাখিদের বাসস্থানও। পরিবেশসচেতন নাগরিকরা এই দিবসটি পালন করে আসছে জলাভূমির অপরিসীম গুরুত্ব অনুধাবন করে।

জল নিয়ে বিপদ সংকেতে দিন-দিন বিশ্বের বড়-বড় দেশগুলিই নয়, ছোট দেশগুলিও চিন্তিত। প্রতি বছর এক শতাংশ করে নাকি জলের ব্যবহারযোগ্যতা বেড়েই চলেছে। তার উল্লেখযোগ্য কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন-নতুন নগরায়ণ। আর এই কারণেই বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জলাশয়গুলিকে সংরক্ষণ প্রযোজন।

জলাভূমি সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন—-

অসংখ্য মানুষের জীবিকার সন্ধান দেয় জলাভূমি। তার মধ্যে মৎস্যচাষ একটি। বিশ্বের প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতির মাছ মিষ্টজলে জন্মায়। জলজ উদ্ভিদ পরিবেশ ভারসাম্যে এক প্রধান ভূমিকা নিয়ে থাকে।

জলাভূমি বন্যা প্রশমনে, ঝড় প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।

জলাভূমি সুরক্ষিত না হলে পৃথিবী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।

জলাভূমির সংরক্ষণ কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে সহায়তা করে।

জলাভূমি বিকল্প শক্তি হিসাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস।

এ ছাড়াও জলাভূমি বিভিন্ন দেশে বিনোদন, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে এক বিরাট ভূমিকা নিয়ে থাকে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *