ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে অতুল চন্দ্র ঘোষ প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। অতুল চন্দ্র ঘোষ ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।অতুল চন্দ্র ঘোষ ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অক্লান্ত কর্মী।
অতুল চন্দ্র ঘোষ (২ মার্চ ১৮৮১ – ১৫ অক্টোবর ১৯৬২) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন কর্মী, লোক সেবক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা ভাষা আন্দোলন (মানভূম) এবং পুরুলিয়া জেলার বঙ্গভূক্তি আন্দোলনের প্রধান স্থপতি।
অতুল চন্দ্র ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মাখনলাল ঘোষ। বর্তমান অযোধ্যার পুরুলিয়া জেলায় পৈতৃক হিটলাল ঘোষের কাছে তাঁর শৈশব কেটেছে। পরে সেখানকার একজন আইনজীবী মেসোমশাই তাকে লালন-পালন করেন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান মহারাজা স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে কলেজ থেকে এফএ এবং কলকাতা মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ক্লাসে যোগ দিন। ১৯০৪ সালে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন এবং ১৯০৮ সালে পুরুলিয়ায় আইন অনুশীলন শুরু করেন। তিনি স্কুলের গ্রন্থাগারিক-অ্যাকাউন্টেন্ট অঘোরচন্দ্র রায়ের কন্যা লাবণ্য প্রভাকে বিয়ে করেন।
অতুল চন্দ্র এবং লাবণ্যপ্রভা স্বামী-স্ত্রী মহাত্মা গান্ধী ও নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্তের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯২১ সালে তিনি আইন ব্যবসা ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। বিহার প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সেক্রেটারি (১৯২১ – ১৯৩৫) এবং মানভূম জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি (১৯৩৫-১৯৪৭) হিসাবে মানভূম এবং কাছাকাছি এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। ১৯২১ সালে মানভূমে কংগ্রেস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত এবং অতুল চন্দ্র ঘোষ যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৫ সালের ১৭ জুলাই নিবারণবাবুর মৃত্যুর পর অতুল চন্দ্র রাষ্ট্রপতি হন। তিনি জেলা সত্যাগ্রহ কমিটির সেক্রেটারি হন (১৯৩০) এবং লবণ সত্যাগ্রহে এবং পরে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য এবং জাতীয় সপ্তাহে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য জেলে যান (১৯৪৫)। মানভূমের ভাষা নীতি নিয়ে কংগ্রেস সরকারের সাথে মতবিরোধের কারণে তিনি জাতীয় কংগ্রেস (১৯৪৭) ত্যাগ করেন এবং একই বছরে লোক সেবক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিহার সরকারের প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত নীতির বিরুদ্ধে তার আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। মানভূম কেশরী নামে পরিচিত হয়। তিনি ১৯৫০-১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বহুবার সত্যাগ্রহ করেছিলেন। ১৯৫৩ সাল থেকে সংঘ ‘টুসু’ গানের আয়োজন করেছে। সংঘ রাজ্য পুনর্গঠন কমিটির কাছে স্মারকলিপি পেশ করে (১৯৫৩-১৯৫৫)। তিনি বিশ্বাস করতেন যে বাঙালি-বিহার সীমান্ত সমস্যাটি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে সমাধান করা যেতে পারে। তারপর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পুরুলিয়া জেলা গঠিত হয়। এজন্য তাকে বঙ্গভূক্তি আন্দোলনের স্থপতিও বলা হয়। তিনি মহাত্মা গান্ধীর গণতন্ত্র পঞ্চায়েত রাজ প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ইত্যাদি আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। অতুল চন্দ্র ঘোষ বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘মুক্তি’-এর সম্পাদক ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা লাবণ্যপ্রভা ঘোষ সম্পাদনার দায়িত্ব নেন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।












Leave a Reply