আমি যতদিন থাকব, ততদিন ঐক্য, শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যাব : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

0
479

মালদা, নিজস্ব সংবাদদাতা, ২৮ এপ্রিল :- “আমার কাছে সতী-সাবিত্রী-সীতা আর জাহানারা-রোশেনারার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।” মালদহের সুজাপুরের জনসভায় এমনটাই বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার মালদহ দক্ষিণের সুজাপুরের দলীয় প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রায়হানের নির্বাচনী প্রচারে জনসভা থেকে নাম না করে মোদিকে মমতার কটাক্ষ, ”শাঁখা-পলা কী জানেন? এসব বাদ দেওয়া নিয়ে কথা বলছেন? কোনওদিন জানেন এসবের মাহাত্ম্য? উনি যা বলেছেন, আমি তা উচ্চারণ করতে চাই না। আমি ওসবে বিশ্বাসও করি না। কিন্তু আমি যতদিন থাকব, ততদিন ঐক্য, শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যাব। মালদায় কোনদিন লোকসভার আসন না পাওয়ার আক্ষেপের সুর ফুটে ওঠে মমতার গলায়।

মালদার দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রায়হান এবং উত্তর কেন্দ্রে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে রবিবার পৃথক দুটি নির্বাচনী সভা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম নির্বাচনী সভাটি তিনি করেন দক্ষিণ মালদার কালিয়াচকের সুজাপুরে। দ্বিতীয় সভাটি করেন উত্তর মালদার হবিবপুরে। দুটি সভাতেই বাংলার কংগ্রেস- সিপিএমের জোট নিয়ে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক ইস্যুতে বিদ্ধ করেন বিজেপি’কেও।

মালদার রূপকার হিসেবে পরিচিত প্রয়াত গনিখানকে স্মরণ করে মমতা বলেন, ‘‘বরকতদাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তিনি যত দিন ছিলেন আপনারা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু এখনও কেন বার বার ওদেরই ভোট দেবেন? গত বিধানসভা ভোটে মালদার ফলাফলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, মালদায় লোকসভা কিন্তু আগে কখনও তৃণমূল জিততে পারে নি। একুশের বিধানসভায় আপনারা আমাদের বিপুল ভোট দিয়েছিলেন বলে বিজেপিকে আটকে দিয়েছিলাম।, তা হলে এ বার কেন হবে না ?’’ এর পর মমতার সংযোজন ‘‘ভুল ত্রুটি যদি কেউ করে, তাতে দলের উপর অভিমান হলে মানুষের কাছে ভুল স্বীকার করা উচিত। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সিপিএমের সঙ্গে জোট করতে বারণ করেছিলাম কংগ্রেকে। মালদহে গনিখানের গড়ে মমতার নিশানায় কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে এমন বলেন মমতা।

রবিবার প্রয়াত কংগ্রেস নেতা গনিখান চৌধুরীর এলাকায় দাঁড়িয়ে এভাবেই কংগ্রেসকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসকে জোট বাঁধতে বারণ করেছিলাম। দু’টি আসনও ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা শোনেনি।’’ মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রায়হানের সমর্থনে প্রচারে গিয়ে সুজাপুরের সভা থেকে বাংলার কংগ্রেস-সিপিএমের জোট নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা।

মমতা বলেন, ‘‘ওরা আসন ভাগাভাগি করেছে। আপনারা কি চান আমি সিপিএমের সামনে আত্মসমর্পণ করি? বিধানসভায় একটি আসনও নেই, তা সত্ত্বেও কংগ্রেসকে দু’টি আসন দিতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, সিপিএম-এর সঙ্গে জোট না করতে। কিন্তু ওরা কথা শোনেনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, এই ইন্ডিয়া জোট আমার তৈরি। নামটাও আমি দিয়েছি, যা দেখে থরথর করে কাঁপেন মোদি। মমতা আরও বিজেপিকে যদি দিল্লিতে সত্যি রুখতে চান, তা হলে বাংলায় ভোট কাটাকাটির রাজনীতি করবেন না।

প্রয়াত গনিখানকে স্মরণ করে মমতা বলেন, ‘‘বরকতদাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তিনি যত দিন ছিলেন আপনারা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু এখনও কেন বার বার ওদেরই ভোট দেবেন? লোকসভায় গিয়ে যে চুপ করে বসে থাকে, মানুষের কথা বলে না, তাঁকে কেন প্রার্থী করব?

প্রসঙ্গত, মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রায়হানকে লড়াই করতে হচ্ছে গনি পরিবারের সদস্য তথা গণিখানের ভাইপো ইশা খান চৌধুরী এবং বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর সঙ্গে। অন্যদিকে উত্তর মালদা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে লড়াই করতে হচ্ছে বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু এবং বাম- কংগ্রেস জোট প্রার্থী মোস্তাক আলমের সঙ্গে। মালদা উত্তর এবং দক্ষিণ দুটি কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। প্রখর তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে দুটি সভাতেই তৃণমূল কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। আলাদা দুটি সভামঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদার দুই প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে বার্তা দিয়ে গেলেন। এখন দেখার অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে মালদার দুই কেন্দ্রে কাঁদের বেছে নেয় আমজনতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here