চারন-সম্রাট মুকুন্দ দাস – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

0
284

ভূমিকা—– মুকুন্দ দাস বাঙালি কবি যাকে চারণ কবি বলেও অভিহিত করা হয়। মুকুন্দ দাস স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশী বিপ্লবাত্মক গান ও নাটক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন স্বদেশী যাত্রার প্রবর্তক। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন চারণকবি ছিলেন। বরিশালের অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে মুকুন্দদাস রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। তার আগ্রহে মুকুন্দদাস মাতৃপূজা নামে একটি নাটক রচনা করেন। দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীতে নবগ্রামে এই নাটকের প্রথম প্রকাশ্য যাত্রাভিনয় হয়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় মুকুন্দদাস একের পর এক গান,কবিতা ও নাটক রচনা করে বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে নূতন উদ্দীপনার সঞ্চার করেন। এরপর ব্রিটিশ সরকার রাজদ্রোহের অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করেন ও বিচারে তাকে দিল্লী জেলে আড়াই বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মাতৃপূজা নাটকটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে।  কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথাক্রমে বাংলা মায়ের দামাল ছেলে চারন-সম্রাট মুকুন্দ উপাধিতে ও সন্তান আখ্যায় ভূষিত করেন।

জন্ম ও শৈশব——

তিনি ১৮৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার বানরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গুরুদয়াল দে এবং মাতার নাম শ্যামাসুন্দরী দেবী এবং স্ত্রীর নাম সুভাষিনী দেবী। তাঁর পিতার দেওয়া নাম যজ্ঞেশ্বর দে এবং ডাকনাম ছিল যজ্ঞ। তার জন্মের পর গ্রামটি পদ্মা নদীতে তলিয়ে গেলে পরিবারটি বরিশালে চলে আসে, যেখানে গুরুদয়াল কাজ করতেন। বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। বরিশালে বৈষ্ণব সন্ন্যাসী রামানন্দ অবধূত যজ্ঞেশ্বরের হরিসঙ্কীর্তন ও শ্যামা সঙ্গীতে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দীক্ষা দেন এবং তাঁর নাম রাখেন মুকুন্দদাস। উনিশ বছর বয়সে, মুকুন্দদাস সাধন-সঙ্গীত নামে একটি স্তোত্রগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। বরিশালের হিতৈশি পত্রিকায় লিখতেন। সারা বরিশাল তাঁর যাত্রা গানে মাতাল হতেন।

মুকুন্দ দাসের বাড়ির বর্তমান অবস্থা——

বরিশাল নগরীতে ঢোকার মুখে নথুলাবাদ বাস টার্মিনাল -সংলগ্ন চারণকবি মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি। বর্তমান স্থানটুকু ঘিরে আছে ছাত্রাবাস, লাইব্রেরি, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং পুজামন্দির ।চারণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি বরিশালের কাশীপুর কালীমন্দিরের জায়গা কিনে ছিলেন। সেই সময়ের মোট জায়গা ছিল ৮৭ শতাংশ, এখন আছে মাত্র ১৯ শতাংশ। বাকিটা বেহাত হয়ে গেছে।

রাজনৈতিক গান ও নাটক রচনা——-

মুকুন্দদাস বরিশালের অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। তাঁর আগ্রহে মুকুন্দদাস মাতৃপূজা নামে একটি নাটক রচনা করেন। দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীতে নবগ্রামে এই নাটকের প্রথম প্রকাশ্য যাত্রাভিনয় হয়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় মুকুন্দদাস একের পর এক গান, কবিতা ও নাটক রচনা করে বাঙালির জাতীয় জীবনে নূতন উদ্দীপনার সঞ্চার করেন। এরপর ব্রিটিশ সরকার রাজদ্রোহের অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন ও বিচারে তাকে দিল্লী জেলে আড়াই বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মাতৃপূজা নাটকটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে। মুকুন্দদাস কারাবাসে থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী সুভাষিণী দেবীর মৃত্যু ঘটে। মুক্তিলাভের পর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও অন্যান্যরা তাঁকে সান্ত্বনা দেন ও উদ্বুদ্ধ করেন যার ফলে তিনি পুনরায় রচনায় মনোনিবেশ করেন। কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথাক্রমে বাংলা মায়ের দামাল ছেলে চারণ-সম্রাট মুকুন্দ উপাধিতে ও সন্তান আখ্যায় ভূষিত করেন।

রচনা——

মুকুন্দদাসের রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী ইত্যাদি।

পরবর্তী জীবন——-

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মে শুক্রবার মুকুন্দদাস মৃত্যু বরণ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here