মৃৎশিল্পীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে কলকাতায় তৈরি হয়েছে কুমোরটুলি, বালুরঘাটের শিল্পীদের এমনটাই দবী হোক এখানেও।

0
222

দঃ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- মৃৎশিল্পীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে কলকাতায় তৈরি হয়েছে কুমোরটুলি। সেখানে মৃৎশিল্পীরা সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে কাজ করতে পারেন। এই সমস্ত মৃৎশিল্পীদের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে মৃৎশিল্পীরা দুর্গা প্রতিমা বানাতে ব্যস্ত।
কলকাতায় কুমোরটুলি থাকলেও বালুরঘাট তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতে এরকম কোন কুমোরটুলি গড়ে ওঠেনি। বালুরঘাটের মৃৎশিল্পীরা দাবি করেছেন যে অবিলম্বে যেন এখানে কলকাতার কুমোরটুলির আদলে একটি কুমোরটুলি তৈরি হয় যেখানে মৃৎশিল্পীরা সহাবস্তানের ভিত্তিতে বিভিন্ন মূর্তি এবং প্রতিমা করতে পারেন।
মৃন্ময়ী দূর্গা মূর্তি গড়ার কাজে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত বালুরঘাটের মৃৎশিল্পী উত্তম পাল বলেন, ‘এটা ঠিক যে বালুরঘাটে এখনো পর্যন্ত কুমোরটুলির আদলে মৃৎশিল্পীদের আলাদা কোন জায়গা নেই। এখানকার মৃৎশিল্পীরা সবাই আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছি কিন্তু আমাদের আর্থিক অবস্থা একদমই ভালো নয়। আধুনিক বা বর্তমান প্রজন্ম সেভাবে মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে না। আমাদের অবিলম্বে দরকার সরকারি সাহায্য। সরকারি সাহায্য না পেলে এই শিল্পটা এক সময় অবলুপ্ত হয়ে যাবে। আমরা জানি কলকাতায় কুমোরটুলি আছে যেখানে আমাদের মত মৃৎশিল্পীরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পায়। সারা দেশ তথা বিশ্বের প্রায় সবাই কুমোরটুলির নাম জানে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থান তো বটেই দেশ তথা সারা বিশ্বেই কুমোরটুলি থেকে দুর্গা প্রতিমা সরবরাহ করা হয়। এটা অত্যন্ত আক্ষেপের যে বালুরঘাটে এখনো পর্যন্ত এরকম একটা কুমোরটুলি গড়ে ওঠেনি। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাবো অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমি এ বছর ১০ টি দুর্গা প্রতিমা গড়ার বরাত পেয়েছি। এখন দিনরাত্রি এক করে যাতে ঠিকঠাক সময়ে এই দুর্গা মূর্তি গুলি উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করতে পারি সেই চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করেছি।’
বর্ষিয়ান মৃৎশিল্পী উত্তম পালের সঙ্গে মূর্তি করার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তার মেয়ে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ফার্স্ট ইয়ারের কলেজ স্টুডেন্ট উর্মি পাল। বাবার সঙ্গে সে দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছে। আধুনিক ও এ প্রজন্মের মেয়ে হওয়ায় সে নিত্যনতুন চিন্তা ভাবনা অর্থাৎ কিভাবে দুর্গা প্রতিমাকে আরো উন্নত এবং জীবন্ত রূপ দেওয়া যায় সে ব্যাপারে বাবাকে সাহায্য করছে।
উর্মি বলে, ‘আমি পড়াশোনা সাথে সাথে মূর্তি করার কাজে বাবাকে সাহায্য করছি। এখন আধুনিক প্রযুক্তি, মোবাইল এবং ইউটিউব এর যুগে অনেক নতুন নতুন চিন্তাভাবনা ঘরে বসেই দেখতে পাওয়া যায়। এই সমস্ত চিন্তা ভাবনা গুলো আমি বাবার সাথে আলোচনা করে দুর্গা মূর্তি গড়ার কাজে ব্যবহার করছি। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে মাটির মূর্তি কিভাবে তৈরি করা হয় সেটা শিখেছি। বাবা এখনো আমাকে শেখায় আর আমি বাবাকে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা গুলো যেটা আমি আধুনিক প্রযুক্তি,স্মার্ট ফোন ও ইউটিউব এর মাধ্যমে দেখছি সেগুলো জানাই। এতে আমাদের কাজ আরো ভালো হচ্ছে।’
উর্মি বলে, ‘সত্যি বালুরঘাটে যদি একটা কলকাতার মত কুমোরটুলি থাকতো তাহলে আমাদের খুব সুবিধা হত। আমি কুমোরটুলির কথা অনেক শুনেছি যে সেখানে মৃৎশিল্পীরা দলগতভাবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সারা বছর মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সেখানকার মৃৎশিল্পীরা সরকারি বিভিন্ন সাহায্যও পেয়ে থাকে। আমরা যদি সরকারি সাহায্য পেতাম তাহলে আমরা আমাদের এই মৃৎশিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম।’
বর্ষিয়ান মৃৎশিল্পী উত্তম পাল বা আধুনিক যুগের কলেজ পড়ুয়া উর্মির সাথে একমত বালুরঘাটের প্রায় অধিকাংশ মৃৎশিল্পীরা। তারা একযোগে দাবি জানিয়েছেন এ ব্যাপারে সরকারি সাহায্যের জন্য। এর সাথে সাথে তাদের আশা নিশ্চয়ই বালুরঘাটে একদিন কলকাতার মতো কুমোরটুলি গঠন হবে যেখানে তাদের মত মৃৎশিল্পীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here