আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ বাঁকুড়া দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের ছোট্ট জনপদ বেলিয়াতোড়। বেলিয়াতোড় এই জন্ম হয়েছিল জগত বিখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী যামিনী রায় এর। এছাড়াও বেলিয়াতোড় একটা অন্য পরিচয় রয়েছে তা হলো মেচা সন্দেস জন্মভূমি। এখানেই প্রায় কুড়িটি পরিবার এই মেচা সন্দেশ তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকেন সারা বছর। যেমনভাবে বিখ্যাত কলকাতার রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়া, জনাই এর মনোহরা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা তেমনভাবেই বিখ্যাত বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় এর মেচা। আর সেই মেচাই সম্পত্তিকালে ইন্ডিজেনাস শিল্পকর্মের হিসাবে জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ পেতে চলেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ্ জুরিডিক্যাল সাইন্সে জি আই তকমার আবেদন জানিয়েছেন বেলিয়াতোড় এর মেচা ব্যবসায়ীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে শুরু হয় মাপকাঠিতে মেচাকে রেখে চুলচেরা খুঁটিনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খ নজরদারি। এমন দুটি ধাপ ডিঙিয়ে ম্যাচা এখন তৃতীয় তথা শেষ ধাপে। তৃতীয় ধাপ পাশ করলেই মিলবে জি আই স্বীকৃতি। আশায় বুক বেধেছেন মেচা ব্যবসায়িরাও, খুশি বাঁকুড়ার আমজনতাও।
মেচা সন্দেশ স্বাদও গন্ধে উৎকৃষ্ট মানের, পাশাপাশি মেচা সন্দেশ টাটকা থাকে বহুদিন আর তাই এই ম্যাচা সন্দেশের কিনতে বেলিয়াতোড়ে ভিড় জমান প্রচুর মানুষ। পর্যটন মনসুমে মেচার চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ, সরবরাহ দিতে হিমশিম খান ব্যবসায়ীরা।
বাঁকুড়া দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের ছোট্ট জনপদ বেলিয়াতোড়। এখানেরই ১৫ থেকে ২০ টি পরিবার ছয় সাত পুরুষ ধরে বিশেষ ধরনের এই মিষ্টি প্রস্তুতিতে দক্ষ। এলাকার মেচামহল, আসল মেচা, আদি মেচা, নব মেচা মহল সহ প্রায় ৩০ টি দোকানে এই বিখ্যাত মিষ্টি পাওয়া যায়। তবে মেচার জনক কে সঠিকভাবে জানা না গেলেও মেচার ইতিহাস যে প্রায় দু’শো বছর পুরাতন তা এক কথায় স্বীকার করে নিয়েছেন প্রত্যেকেই। তবে এই মিষ্টি তৈরি করা একেবারেই সহজ কাজ নয়। কারণ মেচা তৈরি করতে যেমন লাগে অনেক সময়, তেমনই লাগে পরিশ্রম। প্রথম দিন বুটের বেসন চনার মতন করে ভাজতে হয়। তাকে আবার মেশিনে গুড়া করে তার সঙ্গে খোয়া ক্ষীর ছানা চিনি পরিমান মতো এলাচ গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে বানানো হয় মন্ড। সেই মন্ড তৈরি করে রেখে দেওয়া হয় ২৪ ঘন্টা। তারপর মন্ড কিছুটা শক্ত হয়ে এলে তাকে গোল্লা পাঁকিয়ে,আগে থেকে তৈরী করে রাখা চিনির সিরাপে ফেলে দেওয়া হয়।রস থেকে এক একটি লাড্ডু সবধানে তুলে রাখা হয় শালপাতায়। কিছুক্ষণ শুকিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেল মেচা সন্দেস। এক একটি মেচার দাম প্রায় ১০ টাকা। আর কাজু কিসমিস দেওয়া মেচা নিতে হলে আপনাকে দাম দিতে হবে কুড়ি টাকা প্রত্যেকটির জন্য। আর তা কিনতেই দূর দূরান্ত থেকে মানুষ হাজির হচ্ছেন বেলিয়াতোড়ে। চেখে দেখে, নরম তুলতুলে মেচা মুখে দিলেই মিলিয়ে যায় জ্বিভের কোন গহ্বরে মালুম পাবেন না আপনিও। আর তাই এই মিষ্টি আজ পর্যটকদের হাত ধরে বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বিমান চড়ে পাড়ি দিয়েছে সুদূর আমেরিকাতে দাবি মেচা ব্যবসায়ীদের।