মুর্শিদাবাদ, নিজস্ব সংবাদদাতা:- মুর্শিদাবাদ জেলার,খড়গ্রাম থানার , কীর্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বুধুরা পাড়া গ্রামের প্রধান রাস্তাটির বেহাল দশা এবং নিকাশি ব্যবস্থার অভাব গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো সুরাহা না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা।
গ্রামের প্রধান রাস্তাটি এতটাই খারাপ যে, সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা ও জলে ভরে যায়। খানাখন্দে ভরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাইকেল, মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, হেঁটে চলাই দায়। প্রায়শই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গ্রামবাসী হায়দার আলী বলেন, অসুস্থ রোগী বা গর্ভবতী মহিলাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে ঢুকতে পারে না, ফলে বাধ্য হয়ে রোগীকে কাঁধে করে বা অন্য উপায়ে প্রধান রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়।
রাস্তার এই বেহাল দশার পাশাপাশি গ্রামে কোনো সুসংহত নিকাশি ব্যবস্থা নেই। বাড়ির বর্জ্য জল যত্রতত্র জমে থাকে, যা মশার breeding ground তৈরি করছে। এর ফলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু-সহ বিভিন্ন জলবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়েছে অনেক বাড়িতেই। শিশুরা খেলাধুলা করতে গিয়ে নোংরা জলের সংস্পর্শে আসছে এবং অসুস্থ হচ্ছে।
গ্রামবাসীরা বারবার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান এবং ব্লক প্রশাসনকে তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়েছে, মৌখিকভাবেও অভিযোগ জানানো হয়েছে বহুবার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রতিবারই আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। তাঁদের প্রশ্ন, “আমরা কি গ্রামবাসীরা রাস্তার সুরাহা কি কোনদিন পাব না। আমাদের কি সুস্থ জীবনযাপন করার অধিকার নেই?”
এ বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং বাজেট এলেই কাজ শুরু হবে। তবে গ্রামবাসীরা এই আশ্বাসে আর ভরসা রাখতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা দুলাল শেখ বলেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে এই কষ্ট সহ্য করছি। ভোট এলে সবাই প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ভোট ফুরোলে সব ভুলে যায়। আর কতদিন এভাবে চলব?”
এই বেহাল রাস্তা এবং নিকাশি ব্যবস্থার কারণে গ্রামের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে, যার ফলে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তাঁরা। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কবে এই অবহেলিত গ্রামবাসীর দিকে নজর দেয় এবং তাঁদের দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সেই আশায় দিন গুনছেন গ্রামবাসীরা।
গ্রামের বেহাল রাস্তা ও নিকাশি: চরম দুর্ভোগে গ্রামবাসীরা, প্রশাসনের উদাসীনতায় বিক্ষোভ চরমে।

Leave a Reply