কেউ বা পাইলট আকাশে বিমান উড়াবে বা কেউ ডাক্তার কিংবা কেউ শিক্ষক হবে বড় হয়ে, কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার রাজশহর গ্রামের নবম শ্রেণীর ছোট্ট প্রীতি সাউয়ের স্বপ্ন বা চিন্তা ভাবনা একটু আলাদা।

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  প্রতিটা মানুষের একটা না একটা স্বপ্ন থাকে, কেউ বা পাইলট আকাশে বিমান উড়াবে বা কেউ ডাক্তার কিংবা কেউ শিক্ষক হবে বড় হয়ে, কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার রাজশহর গ্রামের নবম শ্রেণীর ছোট্ট প্রীতি সাউয়ের স্বপ্ন বা চিন্তা ভাবনা একটু আলাদা। আমরা যারা আছি, বাড়িতে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র আসবাবপত্র নষ্ট হলে ফেলে দেই কিংবা ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দেই, কিন্তু এই প্রীতি বাড়ির কোন অব্যাবহৃত জিনিসপত্র ফেলে না দিয়ে বরং সেগুলোকে নিয়ে নিজের হাতের কাজে লাগায়। আমরা যেমন ওষুধ খাওয়ার পর ওষুধের খোলা ফেলে দিই কিংবা খারাপ হওয়া কোন ল্যাম্প , কিংবা বিভিন্ন ধরনের ক্রিম যেমন ভেসলিন কিংবা বোরোলিন কৌটো আমরা ফেলে দেই। কিন্তু এই ছোট্ট প্রীতির উপস্থিত বুদ্ধি সেগুলোকে কাজে লাগায়। সেগুলো দিয়েই কাঁচি দিয়ে কাটাকুটি করে কিংবা রং তুলি দিয়ে পড়াশোনার অবসর সময়ে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন তৈরি করে সে। কোথাও কাগজের তৈরি তলোয়ার তৈরি করেছে, কিংবা কাগজ দিয়ে ছোট্ট হারমনি তৈরি করেছে , আবার ফেলে দেওয়া ল্যাম্প দিয়ে তৈরি করেছে ব্যাঙের ছাতা, ফেলে দেওয়া কাঁচের বোতলে রং তুলি দিয়ে ডিজাইন করে ছোট্ট ফুলদানি তৈরি করেছে সে, আর তাতেই যেন সে পারদর্শী হয়ে উঠেছে।
কিন্তু সব থেকে অবাক করা বিষয় তাঁর বাড়িতে সমস্ত দেব-দেবীর ছবি থাকলেও নেই জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা দেবীর মূর্তি। সামনেই যে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা, মহিষাদল এর রথ কিংবা তাঁর সাথে নতুন সংযোজন দীঘার জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা পর্যটক সহ সাধারণ মানুষের মন কাড়বে হয়তো, কিন্ত দীঘায় জগন্নাথ দেবের রথের রশ্মি টানার সৌভাগ্য হয়তো হয়ে উঠবে না প্রীতির, তাই নিজের বোন কিংবা প্রতিবেশী ছোট ছোট ভাইবোনদের নিয়ে নিজের গ্রামের সরল রাস্তায় রথ টানবে সে কিন্তু জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা কোথায়! অকারনে পয়সা খরচ করে মূর্তি কিনতে যাবেই বা কেন! যখন সে নিজেই হাতের কারসাজির কারিগর। তাই প্রীতি নিজেই ফেলে দেওয়া ভেসলিনের কৌটো দিয়ে তুলির টানে ফুটিয়ে তুলেছে জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি। আর সেই মূর্তিই রথে চড়ে যাবে মাসির বাড়ি। তাঁর এই হাতের কারুকাজ দেখে প্রতিবেশী ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও আবদার ধরেছে তাদেরও বানিয়ে দিতে হবে এমন মূর্তি, তাঁরাও তাঁর হাতের তৈরি জগন্নাথ,বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীর মূর্তি নিয়ে রথ টানবে। শুধু কি তাই অনেকেই ঘরের দেওয়াল সাজাতে বিভিন্ন ডিজাইন করতে ভালোবাসেন বড় বড় শিল্পীদের দ্বারা, কিন্তু এই ছোট্ট প্রীতি নিজের হাতে তুলির টানে বাড়ির দেওয়ালে ফুটিয়ে তুলেছে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন। আর এভাবেই নিজের স্বপ্নকে আগামীদিনে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে পাঁশকুড়ার প্রীতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *