পথনাটিকা, র‍্যালি, সেমিনারে অঙ্গদানের বার্তা ছড়ালো আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ।

হুগলি, নিজস্ব সংবাদদাতা:- হুগলি জেলার আরামবাগে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী সচেতনতামূলক কর্মসূচি— ‘সঞ্জীবনী অভিযান’, যার মূল বার্তা ছিল: “অপর মানুষের জীবনে আলো আনুন, অঙ্গদানের মাধ্যমে”।
এই কর্মসূচির আয়োজন করে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, যেখানে পথনাটিকা, র‍্যালি ও সেমিনারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে অঙ্গদানের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, ও সাধারণ মানুষ।

জীবিত ও মৃত—উভয় অবস্থায়ই সম্ভব অঙ্গদান

সেমিনারে জানানো হয়, ১৮ বছর বয়স পূর্ণ কোনো সুস্থ ব্যক্তি আইনানুগভাবে নিজের একটি কিডনি বা লিভারের অংশ দান করতে পারেন। বিশেষ করে লিভার এমন একটি অঙ্গ যা দাতার শরীরে কিছুদিনের মধ্যেই পূর্বের আয়তন ফিরে পায়।
অন্যদিকে, মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রেন স্টেম ডেথ (Brain Stem Death) ঘোষণার পরও, সেই ব্যক্তির শরীর থেকে বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে তা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগীদের দান করা সম্ভব। এই সিদ্ধান্ত নিতে হয় চিকিৎসকদের একটি স্বীকৃত কমিটির মাধ্যমে।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনদানের প্রক্রিয়া

ট্রান্সপ্লান্টের ক্ষেত্রে অঙ্গ বিশেষের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা (Preservation Time) রয়েছে:

হৃদপিণ্ড (Heart): ৪–৬ ঘণ্টা

ফুসফুস (Lungs): ৪–৮ ঘণ্টা

খাদ্যনালী (Intestines): ৬–১০ ঘণ্টা

লিভার: ১২–১৫ ঘণ্টা

প্যানক্রিয়াস: ১২–২৪ ঘণ্টা

কিডনি: ২৪–৪৮ ঘণ্টা

এ কারণেই ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর অঙ্গ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা প্রয়োজন।

কর্নিয়া দানেও আলোর সম্ভাবনা

যদি কোনো ব্যক্তি হাসপাতালের বাইরে, অর্থাৎ বাড়িতে মারা যান, সে ক্ষেত্রেও মৃত্যুর ৬ ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া (চোখের পাতার স্বচ্ছ পর্দা) সংগ্রহ করা সম্ভব। এই কর্নিয়া অন্য একজন দৃষ্টিহীন মানুষকে পৃথিবী দেখার সুযোগ এনে দিতে পারে।

সচেতনতায় সফল প্রচার

‘সঞ্জীবনী অভিযান’-এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে অঙ্গদানের নিয়ে ভয়, ভুল ধারণা ও কুসংস্কার দূর করা।
পথনাটিকা ও র‍্যালিতে অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের অভিনব পরিবেশনা সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র সাড়া ফেলে।

শেষ কথা

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গ প্রতিস্থাপন আজ বহু রোগীর জীবনরক্ষার একমাত্র আশ্রয় হয়ে উঠেছে।
এই ধরনের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি শুধুমাত্র চিকিৎসকদের নয়, সমগ্র সমাজের কাছে একটি মানবিক আহ্বান—
“জীবন দিতে পারি, মৃত্যুর পরেও।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *