অতুল সেন: অগ্নিযুগের সাহসী বিপ্লবী ও ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ যোদ্ধা।

ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস শুধু কূটনীতির নয়, বরং এটি একান্তভাবে জড়িত ছিল অসংখ্য তরুণ প্রাণের ত্যাগ, সাহস ও আত্মবিসর্জনের সঙ্গে। এই বিপ্লবীদের মধ্যে এক অগ্রগণ্য নাম হলো অতুল সেন—একজন বাঙালি যুবক, যিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংসের লক্ষ্যে। তিনি ছিলেন অগ্নিযুগের সাহসী বিপ্লবী ও শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামী, যাঁর জীবন ও মৃত্যু আজও ভারতের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয়।

🧬 জন্ম ও প্রেরণার বীজ

অতুল সেন জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের খুলনা জেলার সেনাহাটি গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন অশ্বিনী কুমার সেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হন এবং ছাত্রজীবনে বিপ্লবী আদর্শে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর জীবনে প্রভাব ফেলেছিলেন খুলনার খ্যাতিমান বিপ্লবী ব্যক্তিত্বেরা—রসিকলাল দাস, অনুজাচরণ সেন, রতিকান্ত দত্ত এবং কিরণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।

🎓 ছাত্রাবস্থায় বিপ্লবের পথে

যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় অতুল সেন যুক্ত হন যুগান্তর দলের সঙ্গে—যেটি ছিল ব্রিটিশ বিরোধী একটি সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন। এই দলে তিনি পরিচিত ছিলেন “সাম্ভু” এবং “কুট্টি” ছদ্মনামে।

🔫 স্যার ওয়াটসনের বিরুদ্ধে অভিযান

১৯৩২ সাল। কলকাতাভিত্তিক ইংরেজ সংবাদপত্র দ্য স্টেটসম্যান নিয়মিতভাবে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল। এই পত্রিকার সম্পাদক স্যার আলফ্রেড ওয়াটসন-কে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় যুগান্তর। এই দায়িত্বে নিযুক্ত হন অতুল সেন।
১৯৩২ সালের ৫ আগস্ট, সাহসিকতার সঙ্গে তিনি ওয়াটসনকে গুলি করেন। কিন্তু প্রাণঘাতী আঘাত হানতে পারেননি। গ্রেফতার হওয়ার আগে অতুল সেন পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন—স্বাধীনতার জন্য এক নিষ্ঠাবান যোদ্ধার আত্মোৎসর্গ।
এর কিছুদিন পর আরও এক বিপ্লবী, মণি লাহিড়ী, আবারও ওয়াটসনকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

🕊️ চিরন্তন শহীদ

মাত্র ছাত্র অবস্থায়, তরুণ বয়সেই অতুল সেন দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে তিনি হয়ে উঠেছেন অগ্নিযুগের এক অনন্য শহীদ। তাঁর মতো বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের পথেই ভারত পেয়েছিল স্বাধীনতার আলো।
আজ তাঁর আত্মবলিদানের দিনে, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি অতুল সেনকে—একজন অকুতোভয় বিপ্লবী, যিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।

📚 তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *