কাঁটাতারের বেড়াতেও ছেদ পড়েনি ভক্তির বাঁধনে, খুটাদহে প্রস্তুতি তুঙ্গে।

মালদা, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ– প্রতীক্ষার আর কিছু দিন। বাঙালির ঘরে আসছে উমা। চারিদিকেই শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। তা কলকাতা শহরতলির বিগ বাজেটের পুজো হোক কিংবা প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার কোনো পুজো। মালদহের বামনগোলা ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম খুটাদহ। স্বাধীনতার পর ১৯৬৪ সালে স্থানীয়রা সকলে মিলে শুরু করেছিল এলাকার প্রথম দুর্গাপুজো। তৈরি হয়েছিল মন্দির। পুজো হতো জাঁকজমক ভাবে। বসত মেলা। পার্শ্ববর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং অধুনা বাংলাদেশের ওই এলাকার বাঙালিরাও এই পুজোতে অংশগ্রহণ করত। দেশ ভাগ হলেও এই এলাকায় ছিল না কাঁটাতারের বেড়া। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে দুই বাংলার বাঙালি মিলে এই পূজো হয়ে উঠতো সম্প্রীতির মহামিলন ক্ষেত্র। যদিও পরবর্তীতে কাঁটাতারের বেড়া হওয়ার পরে মন্দিরের অংশটুকু পড়ে যায় সীমান্তের ওই পাড়ে জিরো পয়েন্টে। ফলে ২০১১ সালে স্থানীয়রা সীমান্তের এই পাড়ে খুঁটাদহ এলাকায় একটি নাটমন্দির নির্মাণ করে। যেখানে এখন মূল পুজো হচ্ছে। তবে এখনো মহাষষ্ঠীর দিন আগে সীমান্তের ওই পাড়ে পুরনো মন্দিরে পুজো দিয়ে সেখান থেকে ঘট নিয়ে আসে। তারপর শুরু হয় এই মন্দিরে পুজো। সম্পূর্ণ রকমভাবে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী সহায়তা করে পুজো কমিটিকে। পুজোর উদ্বোধনও করেন বিএসএফ আধিকারিকরা। এই পুজোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন অষ্টমীর দিন মহাভোগ। ঐদিন পার্শ্ববর্তী অন্যান্য পুজো কমিটি থেকে এখানে ভোগ পাঠানো হয়। এই ভোগ একত্রিত করে বিতরণ হয় নববীর দিন। সন্ধিপূজা শুরু হয় দুস্থ মেধাবী ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। এছাড়াও প্রত্যেক বছর দুইজন দুস্থ মেধাবী ছাত্র ছাত্রীর পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়া হয় পুজো কমিটির পক্ষ থেকে।
সাম্প্রতিককালে ওপার বাংলা থেকে আর মানুষ আসেনা। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি বাংলাদেশে যেভাবে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। দুর্গাপুজো করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই তারা ওপার বাংলার মানুষকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন না। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এলাকার মানুষের আবেগ এবং উচ্ছ্বাস। চলছে চূড়ান্ত মুহূর্তের প্রস্তুতি। আট থেকে আশি খুটাদহের সকলে এখন উমার আগমনীর অপেক্ষায় দিন গুনছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *