দারিদ্র্যকে হার মানিয়ে সৃজনশীলতার ছোঁয়া, সোনাই দাসের প্রতিমা আজ সবার প্রশংসার কেন্দ্রবিন্দু।

দক্ষিণ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- অযোধ্যা গ্রামের হঠাৎ পাড়ায় বাড়ি। অযোধ্যা কালিদাসী বিদ্যানিকেতনের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সোনাই। এবারে নিজের হাতে বিশ্বকর্মা প্রতিমা গড়ে, নিজে রং করে তাক লাগিয়ে দিল সবাইকে। সেই প্রতিমায় এখন সবার দেখার ও আগ্রহের জায়গা।
ষষ্ঠ শ্রেণীর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিতে গিয়েছিলেন অযোধ্যা কালিদাসী বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক তুহিনশুভ্র মন্ডল। ছবি আঁকার বিশেষ ক্লাস ছিল সেটা। শিক্ষক নিজে একটা ছবি বোর্ডে এঁকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন এই ছবির সঙ্গে মানানসই তোমরাও কিছু ছবি এঁকে যুক্ত করতে পারো। শিক্ষক রেখে দেওয়া বাড়ি বাড়ির পাশে থাকা গাছ,বেড়া,সূর্য এবং উড়ে যাওয়া পাখির সঙ্গে এক এক করে ছাত্রছাত্রীরাও ব্ল্যাকবোর্ডে যুক্ত করছিল তাদের হাতে আঁকা ছবি। কেউ এঁকেছিল মেঘ-বৃষ্টি, নদী, জলের নীচে মাছ,ফুলের টব ইত্যাদি। সোনাই দাস কে কে ছিল গাছের মধ্যে পাখির বাসা। আর তার মধ্যে ডিম। শিক্ষকের মনে হয়েছিল ছেলেটি সংবেদনশীল। আঁকা ছবির প্রশংসা করতেই নিজেই বলল স্যার আমি ঠাকুরও বানাই। এবার বিশ্বকর্মা ঠাকুরও বানিয়েছি। স্টাফ রুমে এসে গল্প করতেই অন্যান্য শিক্ষিকা গার্গী দাস বললেন এর আগে বিদ্যালয়ের কর্মশিক্ষাতেও সুন্দর হাতের কাজ জমা দিয়েছিল।
কেন বানিয়েছো বিশ্বকর্মা ঠাকুর? কবে থেকে এই শখ?
সোনাই দাস বললো ‘ ঠাকুর বানাতে ভালো লাগে। ইউ টিউব দেখে শিখেছি। রংও নিজে করেছি। এই শখ আমার কিছুদিন আগে থেকে’- সম্প্রতিভ সোনায় দাসের ঝটপট উত্তর।
বাবা শঙ্কর দাস। পেশায় পতিরামে চটকলের শ্রমিক। অন্য সময়ে টোটো চালান। মা স্মৃতি দাস গৃহবধু। তাদের কথায় ‘ ছেলে দিনরাত এসব নিয়েই মেতে থাকে’।
আর্থিক সমস্যার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করা এই পরিবারে জন্ম নিয়েছে সৃজনশীলতার স্বপ্ন ভরা চোখ। সোনাইয়ের দিদি রুমি দাস বলেন ‘ ভাইকে দেখেছি বিদ্যালয়ের থেকে এসেই মন দিয়ে ঠাকুর গড়ার কাজ করছে। এটা ওর খুবই ভালোলাগা কাজ’।
কি বলছেন সোনাইয়ের বিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিনশুভ্র মণ্ডল? তার কথায় ‘ এটা ওর বিশেষ প্রতিভা। প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যেও এমন প্রতিভা আছে সেই কথা তুলে ধরতে প্রতিমা যখন তৈরি করছিল সেই ছবিও সমাজ মাধ্যমে দিয়েছিলাম। সবাই খুব প্রশংসা করেছেন। সোনাই কি সেসব কথা জানিয়েছি ও ভীষণ উৎসাহিত হয়েছে। আগামীতেও ওর এই প্রতিভার বিকাশে যদি কোন ভাবে কাজে লাগতে পারি সেই দিকে নজর রাখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *