পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- প্রায় ৭ বছর আগে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের গড়কিল্লা গ্রামে একটি পানের বরোজ থেকে উদ্ধার হয়েছিল মহিলার মুন্ডুহীন নগ্ন দেহ। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে গ্রেফতার হয় এক তান্ত্রিক সহ তাঁর দুই মহিলা সঙ্গী । দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর অবশেষে ধৃতদের দোষী সাব্যস্ত করেন তমলুক ফার্স্ট ট্র্যাক সেকেন্ড কোর্টের বিচারক অভিজিৎ ঘোষ। বুধবার অভিযুক্ত তন্ত্রসাধক রামপদ মান্না, তাঁর সঙ্গী পূর্ণিমা বিশ্বাস এবং টুকটুকি সর্দারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর তমলুকের গড়কিল্লা গ্রামের চণ্ডীচরণ মান্নার পানের বরোজে এক যুবতীর মুণ্ডহীন নগ্ন দেহ ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। গোপনাঙ্গ ঝলসানো ছিল। তমলুক থানার পুলিস দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। কিন্তু মুণ্ড পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার তিনদিনের মাথায় পুলিস চণ্ডীচরণের ছেলে রামপদ মান্নাকে গ্রেফতার করে। কলকাতার নিউটাউনে তাঁর একটি সেলুন ছিল। সেখানেই তন্ত্রমন্ত্র এবং জড়িবুটির কারবার চালাত সে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সেখানেই বাণী সর্দার নামে এক বয়স্কা মহিলার চপের দোকান ছিল। তাঁর পরিবারে যাতায়াত ছিল রামপদর। ওই বৃদ্ধার বিবাহিত মেয়ে বাগুইআটির বাসিন্দা পার্বতী সরকার (৩১) এর সঙ্গে ওই নাপিতের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুধু পার্বতী নয়, তাঁর বিবাহিত দিদি পূর্ণিমা বিশ্বাস এবং বউদি টুকটুকি সর্দারের সঙ্গেও রামপদ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল।
২০১৬ সালে অক্টোবর মাসে সিদ্ধিলাভের উদ্দেশে রামপদ পার্বতীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। তাঁর এই পরিকল্পনায় সঙ্গ দেয় পর্বতীর দিদি পূর্ণিমা এবং বউদি টুকটুকি। রামপদকে আরও বেশি করে কাছে পেতে পূর্ণিমা এবং টুকটুকি ওই পরিকল্পনায় সায় দেয়। সেইমতো ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিউটাউন থেকে পার্বতীকে নিয়ে তমলুকের উদ্দেশে রওনা দেয় রামপদ। সন্ধ্যায় মেচেদা স্টেশনে নামার পর একটি দশকর্মর দোকান থেকে সিঁদুর, আলতা, ধূপ, ধুনো প্রভৃতি কেনে। এছাড়া, একটি হার্ডওয়ারের দোকান থেকে একটি ধারালো ছুরি কেনে।
খাওয়ার জন্য দু’টি এগরোলও কেনে। সেখান থেকে গড়কিল্লায় নিজেদের পান বরজে ওই যুবতীকে নিয়ে যায়। সেখানে নগ্ন করে তন্ত্রসাধনা চলে। জ্বলন্ত ধুনো পার্বতীর নগ্ন শরীরে ছেটানো হয়। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে ধড় ও মুণ্ড আলাদা করে দেয় রামপদ। ব্যাগের মধ্যে মুণ্ড ভরে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর হেঁটে উত্তর ওষুধপুর গ্রামে কচুরিপানা ভর্তি খালে ফেলে চম্পট দেয় সে।
তমলুক আদালতের সরকারী আইনজীবি সৌমেন কুমার দত্ত জানান, “পুলিশ ঘটনাস্থলের মোবাইল ফোনের টাওয়ার ট্র্যাক করে রামপদর জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়। তাছাড়া ভোরে মুণ্ড নিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা তাকে দেখে ফেলেছিলেন। তাঁরাও মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হলেন নিহত পার্বতীর আর এক বউদি প্রীতি সর্দার। তিনি রামপদ সহ তিনজনের গোটা পরিকল্পনা কথা গোপনে শুনেছিলেন বলে কোর্টে দাঁড়িয়ে সওয়াল করেছেন”।