চণ্ডীগড়, ভারতের একটি পরিকল্পিত শহর, তার আধুনিক শহুরে নকশা, সবুজ পার্ক এবং পরিচ্ছন্ন রাস্তার জন্য বিখ্যাত। তবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে লুকিয়ে আছে এক স্বর্গরাজ্য—সুখনা লেক (Sukhna Lake)। এটি শুধু এক জলাশয় নয়, বরং প্রকৃতি, শান্তি এবং বিনোদনের এক অনন্য মিলনস্থল। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক, দম্পতি, পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে এ লেকে সময় কাটাতে আসে।
🌊 লেকের সৃষ্টি ও ইতিহাস
সুখনা লেকটি ১৯৫৮ সালে পরিকল্পিত শহর চণ্ডীগড়ের প্রাথমিক নগর উন্নয়নের অংশ হিসেবে তৈরি হয়।
শহরের তাত্ত্বিক নকশাকারী লেক করিয়েন (Le Corbusier) এবং স্থানীয় প্রকৌশলী নেক চাঁদের পরামর্শে এই জলাধার তৈরি হয়।
লেকটি পাহাড়ি জলস্রোত দ্বারা সৃষ্ট একটি বাঁধ দিয়ে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এবং এটি প্রায় ৩ কিমি দীর্ঘ, ১ কিমি প্রশস্ত।
লেকটির মূল উদ্দেশ্য ছিল শহরের পানি সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। ধীরে ধীরে এটি চণ্ডীগড়ের মানুষের প্রিয় অবকাশ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
🌿 প্রকৃতি ও পরিবেশ
সুখনা লেকের চারপাশে রয়েছে সবুজ বাগান, পদচারণাপথ এবং ছোট ছোট পার্ক।
শীতকালে লেকের পৃষ্ঠে কুয়াশার ঢেউ ওঠে, আর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় জলরাশির আয়না হয়ে ওঠে এক অসাধারণ দৃশ্য।
এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়—রূপচাঁদা (kingfisher), হরিয়াল (heron), এবং বসন্তকালে অভ্যন্তরীণ প্রজাতির জলজ পাখিও দেখা যায়।
লেকের চারপাশে চলার বা সাইকেল চালানোর জন্য প্রশস্ত পথ রয়েছে, যা ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা।
🚣 বিনোদন ও কার্যকলাপ
সুখনা লেক কেবল চোখের আনন্দ নয়, এটি একাধিক বিনোদনেরও স্থান।
- বোট রাইড: পর্যটকরা পেডেল বোট বা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লেকের মাঝখানে যেতে পারে।
- চলাফেরা ও জগিং: লেকের চারপাশে দীর্ঘ হাঁটার পথ, সাইক্লিং ট্র্যাক এবং জগিং লেন রয়েছে।
- পিকনিক ও পরিবারিক সময়: পরিবারের সঙ্গে এসে পিকনিক করা বা লেকের ধারে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় স্থানীয়রা এখানে যোগব্যায়াম, ধ্যান বা ক্রীড়া করতে আসে।
📸 ফটোগ্রাফির স্বর্গরাজ্য
সুখনা লেকের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ।
সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় লেকের পানির প্রতিফলন, পাহাড়ি প্রেক্ষাপট এবং নীরব প্রকৃতি মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে।
ছোট ছোট নৌকা, জেগে থাকা পাখি, লেকের ধারে দাঁড়ানো পর্যটক—সবই ছবিতে জীবনানন্দ যোগ করে।
🛣️ কীভাবে পৌঁছাবেন
- বিমান পথে: নিকটতম বিমানবন্দর চণ্ডীগড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লেক থেকে মাত্র ৭ কিমি দূরে।
- রেলপথে: চণ্ডীগড় রেলস্টেশন থেকে অটোরিকশা বা ক্যাবের মাধ্যমে সহজে পৌঁছানো যায়।
- সড়কপথে: চণ্ডীগড়ের শহরের সব মূল সড়ক এবং বাস সার্ভিস লেকে সহজভাবে সংযুক্ত।
🕰️ ভ্রমণের সেরা সময়
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সুখনা লেকে ভ্রমণ সবচেয়ে উপযুক্ত।
এই সময়ে আবহাওয়া মনোরম থাকে, এবং লেকের চারপাশে প্রকৃতির সৌন্দর্য সর্বাধিক উপভোগ করা যায়।
🌟 শেষ কথা
সুখনা লেক কেবল একটি জলাধার নয়, এটি চণ্ডীগড়ের হৃদয়।
প্রকৃতি, শান্তি, বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক মিলনের এক অনন্য স্থান এটি।
প্রত্যেক ভ্রমণপ্রেমীর জন্য সুখনা লেক এক অপরিসীম আনন্দের ঠিকানা।
লেকের ধারে বসে নীরবতা উপভোগ করা, নৌকায় ভেসে যাওয়া, কিংবা সূর্যাস্তের রঙিন আকাশের সঙ্গে প্রতিফলিত পানির সৌন্দর্য দেখা—এগুলো এক জীবনের মধুর অভিজ্ঞতা।
সত্যিই বলা যায়, “সুখনা লেক শান্তি, সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক রূপের এক অনন্য মিলনস্থল।”












Leave a Reply