মহালয়া ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

আজ ও মহালয়ায় বেজে ওঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এর চন্ডী পাঠ। বাঙালি এই কন্ঠ শুনতে শুনতে বড় হয়ে উঠেছে। সেই কিংবদন্তী মনূষটির জিবন সম্পর্কে কিছু কথা আমরা জেনে নেবো। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র  ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি বেতার সম্প্রচারক, নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। তিনি কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন। পঙ্কজকুমার মল্লিক ও কাজী নজরুল ইসলামের সমসাময়িক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯৩০-এর দশক থেকে সুদীর্ঘকাল অল ইন্ডিয়া রেডিওয় বেতার সম্প্রচারকের কাজ করেছেন। এই সময় তিনি একাধিক নাটক রচনা ও প্রযোজনাও করেন।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণের সর্বাধিক পরিচিতি তার মহিষাসুরমর্দিনী নামক বেতার সঙ্গীতালেখ্যটির জন্য। ১৯৩১ সাল থেকে অদ্যাবধি মহালয়ার দিন ভোর চারটের সময় কলকাতার আকাশবাণী থেকে এই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ এই অনুষ্ঠানের ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেছেন।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একাধিক নাটকে অভিনয় ও পরিচালনার কাজও করেন। ১৯৫৫ সালে নিষিদ্ধ ফল নামে একটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেছিলেন তিনি।

১৯০৫ সালের ৪ আগস্ট উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জন্ম হয়। তার ডাকনাম ছিল বুশী। পিতা ছিলেন রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও মা ছিলেন সরলাবালা দেবী। পরবর্তীকালে ঠাকুমা যোগমায়া দেবীর কেনা ৭, রামধন মিত্র লেনে উঠে আসেন তার পরিবারবর্গ। কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন বহুভাষাবিদ। তিনি ১৪টি ভাষা জানতেন। নিম্ন আদালতে দোভাষীর কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের জগতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। কালীকৃষ্ণ পুলিশ কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী কালীচরণ ঘোষের দ্বিতীয় সন্তান সরলাবালা দেবীকে বিবাহ করেন। ১৯২৭ সালে তিনি “রায়বাহাদুর” খেতাব পান। কালীকৃষ্ণের দুই পুত্র জন্মায় – ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯২৮ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একাধিক ধ্রুপদি কাহিনিকে বেতার নাট্যের রূপ দেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি যোগ দেন অল ইন্ডিয়া রেডিওয়। এই সময় থেকেই দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেবী দুর্গার পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে দুই ঘণ্টার সঙ্গীতালেখ্য মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এই অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেন। আজও দুর্গাপূজা শুরু হয় এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে। 

।।সংগৃহীত।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *