মানুষের অধিকার আর মাতৃভূমির প্রতি নিবেদিত শহীদ, বাংলাভাষার প্রথম প্রাণপুরুষ – ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

0
384

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বাংলাভাষার প্রথম প্রাণপুরুষ হিসেবে পরিচিত। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত – একজন বাঙালি আইনজীবী, সমাজকর্মী, ভাষা সৈনিক।  তিনি মূলত রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিত।  তিনি দেশভাগের আগে ভারতীয় উপমহাদেশের ভারতীয় অংশে এবং পরে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনীতিবিদ হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।

প্রাথমিক জীবন—

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর তৎকালীন বাংলার ত্রিপুরা (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া) জেলার রামরাইল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতা জগবন্ধু দত্ত কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।  ধীরেন্দ্রনাথ নবীনগর হাই স্কুল, কুমিল্লা কলেজ এবং কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যয়ন করেন।  তিনি ১৯০৪ সালে নবীনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯০৬ সালে কুমিল্লা কলেজ থেকে এফ.এ.  কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯০৮ সালে বিএ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ থেকে বিএল পাস করেন।

কর্মজীবন—

ধীরেন্দ্রনাথের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। এরপর আইন পেশায় নিয়োজিত হন। তবে রাজনীতি ও আইন পেশার পাশাপাশি তিনি আমৃত্যু দেশ ও মানুষের কল্যাণে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি প্রায় এক বছর কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গুড়া উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।  তিনি ১৯১১ সালে কুমিল্লা জেলা বারে আইন চর্চার জন্য যোগ দেন।  ১৯০৭ সালে, তিনি ত্রিপুরা হিতসাধনী সভার সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯১৫ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে অংশ নেন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণ করে তিনি ‘মুক্তি সংঘ’ নামে একটি সমাজকল্যাণ সংস্থা গঠন করেন। তিনি কুমিল্লার একটি সুপরিচিত জাতীয়তাবাদী সংগঠন অভয় আশ্রমের কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিলেন এবং ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। 

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম—

সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী এবং ব্যারিস্টার আবদুর রসূলের রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।  দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে তিনি তিন মাসের জন্য আইন প্র্যাকটিস স্থগিত করেন এবং অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।  ১৯৩৭ সালে তিনি বেঙ্গল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন।  ধীরেন দত্ত বেঙ্গল প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন, বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল বর্রোয়ার্স এবং বেঙ্গল মানিলেন্ডার অ্যাক্ট পাসের সাথে যুক্ত ছিলেন।  তিনি ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেন। ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন এবং বিভিন্ন কারাগারে কঠোর ও দ্রুত সাজা ভোগ করেন।


মুক্তিযুদ্ধ—

১৯৬০ সালে, পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করার পর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ‘এবডো’-এর শিকার হন।  ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাকে গৃহবন্দী করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন।  তা সত্ত্বেও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।  ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ রাতে কুমিল্লার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী অ্যাডভোকেট আব্দুল করিমের তত্ত্বাবধানে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ তাঁর ছোট ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকে গ্রেফতার করে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

পুরস্কার ও সম্মননা—

 ১৯৯৭ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার” হিসাবে তাকে “ভাষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসাধারণ অবদানের জন্য।

মৃত্যু—

২৯ মার্চ, ১৯৭১ সালে তিনি প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here