লেজার লাইট শো, ওয়াটার ফাউন্টেন সিস্টেম গড়ে উঠছে নায়কালী মন্দিরের পাশে।

0
195


পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:– পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দীঘা লাগোয়া পূর্ব মুকুন্দপুর গ্রামে প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন নায়েকালী মন্দিরের পুজোকে ঘিরে এলাকা বাসীর মধ্যে বিশেষ আবেগ লক্ষ্য করা যায়। নায়েকালী অর্থাৎ নৌকার উপর মা কালীর অধিষ্ঠান। তবে নায়েকালী মন্দিরে সিংহের উপর মা দুর্গার মূর্তিও রয়েছে। আর ছোট নৌকার উপর মা কালীর ছোট পাথরের মূর্তি রয়েছে। তাই এখানে দুর্গা এবং কালী এক সঙ্গে পূজিতা হন। দুর্গাপুজো এবং কালীপুজোর সময় বিশেষ পুজো করা হয়। তবে দোলপূর্ণিমার সময় নায়েকালীর বার্ষিক বড় পুজো হয়। সারা বছরই স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা তো বটেই, দীঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা নায়েকালী মন্দির সহ সংলগ্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ দর্শনে আসেন। তাই জায়গাটিকে পর্যটক এবং ভ্রমণ প্রিয় মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিশেষ ভাগে উদ্যোগী হয়েছে দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থা। পর্যটকদের বিনোদন ও মনোরঞ্জনের জন্য থ্রি-ডি থিয়েটার, লেজার লাইট শো, ওয়াটার ফাউন্টেন সিস্টেম গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে উন্নয়ন সংস্থা। মন্দির সংলগ্ন ঝিলে থাকবে বোটিংয়ের ব্যবস্থা। এই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে প্রায় ১৫কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। ইতি মধ্যে অনেক টাই কাজ এগিয়ে গিয়েছে। দীঘা-শৌলা মেরিনড্রাইভ রাস্তার পাশেই রয়েছে নায়েকালী মন্দির। দীর্ঘকাল ধরে এখানে ছোট পাকার মন্দির ছিল। কয়েক বছর আগে গ্রামবাসীদের আর্থিক সহায়তায় সুদৃশ্য এবং সুউচ্চ সাদা রঙের মন্দির তৈরি হয়। খাল, জলাভূমি এবং গাছ গাছালি মিলিয়ে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশও মনোরম। আগে এই এলাকাটি কার্যত ঝোপজঙ্গলে ঘেরা ছিল। সংশ্লিষ্ট পদিমা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। তারপর ৩০ লক্ষের বেশি টাকা ব্যয়ে এখানে একটি সাজানো-গোছানো পার্ক গড়ে তুলেছে। আগত পর্যটক সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ জন পার্কে ঘুরে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে যান। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বহু কাল আগে মাছ ধরতে যাওয়ার পথে শঙ্করপুর মোহনায় প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে মৎস্য জীবীদের নৌকা। তখন কার দিনে তালগাছের কাণ্ড দিয়ে তৈরি ডিঙি নৌকা দিয়ে মাছ ধরা হতো। বিপদে পড়ে মা কালীকে স্মরণ করে ছিলেন মৎস্য জীবীরা। কথিত আছে, তাঁরা আশ্চর্যন জনক ভাবে নৌকাডুবি থেকে রক্ষা পেয়ে ছিলেন। তারপর মাঝিকে মা কালী স্বপ্নাদেশ দেন, এখানেই আমার প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু কর। জঙ্গলাকীর্ণ এই এলাকায় খড়ের চালার মাটির ঘরে মা কালীকে প্রতিষ্ঠা করেন মাঝি। পরবর্তী কালে রামনগরের বালিসাইয়ের বারভুঁইয়াদের আমলে পাকা মন্দির তৈরি হয়। যদিও সেই মন্দির বহুকাল আগে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তারপর কয়েক দশক ধরে টালির চালার ছোট পাকার মন্দির ছিল। স্থানীয় পণ্ডা পরিবার বংশানুক্রমিক মন্দিরে সেবা কাজ করে আসছেন। প্রতিদিন নিত্যপুজো হয় এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু মানুষ পুজো দিতে আসেন। রয়েছে ক্ষীরভোগ ও অন্নভোগ দিয়ে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা। মন্দির পরিচালন কমিটির সম্পাদক তপন কর বলেন, নায়েকালীর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বহু মানুষ এখানে মনস্কামনা পূরণের জন্য মানত করেন এবং পুজো দেন। তাঁদের মনস্কামনা পূরণও হয়। দীঘা-শঙ্করপুর এলাকার অধিকাংশ ট্রলার-নৌকা নায়েকালী মন্দিরে পুজো দিয়েই সমুদ্র যাত্রা করে। উন্নয়ন সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানস কুমার মণ্ডল বলেন, আমরা নায়েকালী মন্দিরকে ঘিরে আমরা পর্যটনের বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছি। পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজও দ্রুততার সঙ্গে চলছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিনোদনের উপাদানগুলি চালু হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here