স্বপ্ন দেশের শুরু হওয়া দুর্গাপূজা আজও নিয়ম মেনে চলে আসছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা, ২৮ সেপ্টেম্বর :- স্বপ্ন দেশের শুরু হয় দুর্গাপূজা।বাংলাদেশের শুরু হওয়া দূর্গাপূজা আজও রীতি মেনেই চালিয়ে যাচ্ছেন তার পূর্বপুরুষরা। ১৮৫০ সালে বাংলাদেশে পূর্বপুরুষ চন্দ্রনাথ তরফদারের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেছিলেন চন্দ্রনাথবাবু৷ দেবী দুর্গার স্বপ্ন দেখেই শুরু পুজোর। পরবর্তরী প্রজন্মের হাত ধরে সেই পুজো ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ থেকে চলে আসে পুরাতন মালদার মোহনবাগান এলাকায়। আজও সেই পুরোনো নিয়ম মেনেই পুজো হয়ে আসছে।’
বলছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু৷ তিনি আরও জানালেন, ‘চন্দ্রনাথ তরফদার শুধু পুজো শুরুর নির্দেশই পাননি৷ মা তাঁকে স্বপ্নাদেশে পুজোর সামগ্রীরও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন৷ স্বপ্নে জানিয়েছিলেন, গ্রামের পুকুরপাড়ে পুজোর সমস্ত সামগ্রী রাখা আছে৷ চন্দ্রনাথ যেন সেসব নিয়ে আসেন৷ পরদিন নির্দিষ্ট স্থানেই পুজোর সব সামগ্রী পান চন্দ্রনাথ৷ আজও সেসব সামগ্রীতেই মায়ের পুজো হয়৷ দেবী মা যে চন্দ্রনাথকে নিজের পিতা হিসাবে প্রতিপন্ন করেছিলেন, তারও উদাহরণ মিলেছিল৷ চন্দ্রনাথের কোনও মেয়ে ছিল না৷ অথচ একবার গ্রামে শাঁখারি শাঁখা বিক্রি করতে এসেছিল৷ একটি মেয়ে তাঁর কাছে শাঁখা নিয়ে যায়৷ শাঁখারিকে বলে, তার বাবা চন্দ্রনাথ তরফদার শাঁখার দাম মিটিয়ে দেবে৷ ওই শাঁখারি চন্দ্রনাথবাবুর কাছে শাঁখার দাম চাইতে গেলে তিনি বুঝতে পারেন, স্বয়ং দেবীই তাঁর মেয়ে হয়ে সেই শাঁখা নিয়ে গিয়েছেন৷’
তরফদার পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্য রবীন্দ্রনাথের সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করেন গ্রামবাসীরা৷ এখনও তরফদার বাড়ির মায়ের মূর্তির কাঠামো তৈরির সময় থেকে শাঁখা এবং পলা পরানো হয়। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, দেবীকে শাঁখা নিবেদন করলে বাড়ির মেয়েরা অবিবাহিত থাকে না। এমনকি বিবাহিত মহিলাদের সন্তান প্রাপ্তির মনস্কামনা পূরণ হয়। বিয়ের বয়স হলেই বাড়ির মেয়েদের ভালো পাত্রের সঙ্গে বিয়ের জন্য অভিভাবকরা দেবী দুর্গার কাছে শাঁখা নিবেদন করে যান। বছর ঘোরার আগে সেই মেয়ের বিয়েও হয়ে যায়। তরফদার বাড়ির দেবী দুর্গার এই মাহাত্ম্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। দেবী এতই জাগ্রত যে তরফদার বাড়িতে কোনোদিন মাছ, মাংস সহ আমিষ খাবার ওঠে না। বৈষ্ণব মতেই এখানে মায়ের পুজো হয়৷
পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে মোহনবাগান গ্রাম৷ খানিকটা দূরেই শুরু হচ্ছে হবিবপুর ব্লক৷ গ্রামে রয়েছে তরফদার পরিবারের দুর্গামন্দির। একান্নবর্তী পরিবার তরফদার বাড়ির। পরিবারের চার শরিক রবীন্দ্রনাথ, বিষ্ণুপদ, গোবিন্দ আর মানিক। পূর্বপুরুষের চালু করা দুর্গাপুজোর আয়োজন তাঁরা এখনও করে যাচ্ছেন৷ প্রত্যেকে শরিক বিবাহিত। তাঁদের সংসার রয়েছে৷ প্রত্যেকেই ব্যবসা করেন। আজও এক হাঁড়িতেই রান্না করে পুজোর চারদিন আনন্দ করে থাকেন। ৩৭ বছর ধরে বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্পী প্রভাতচন্দ্র পাল এখানে প্রতিমা গড়ছেন। যতদিন প্রতিমা গড়েন, তিনিও নিরামিষ খাবার খান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *