শিশু দিবস শিশুদের নিয়ে উদযাপিত একটি দিবস। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়ে থাকে। শিশু দিবসটি প্রথমবার ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল তুরস্কে পালিত হয়েছিল। বিশ্ব শিশু দিবস ২০ নভেম্বর-এ উদ্যাপন করা হয়, এবং আন্তর্জাতিক শিশু দিবস জুন ১ তারিখে উদ্যাপন করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব নির্দিষ্ট দিন আছে শিশু দিবসটিকে উদ্যাপন করার।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুর জন্মদিনকে শিশু দিবস (Children’s Day) হিসেবে পালন করা হয়। ১৮৮৯ সালের নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখ নেহরুর জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি-ই হন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী । শিশুদের প্রতি তাঁর স্নেহ ও ভালোবাসার কথা সর্বজন বিদিত। তাই তাঁকে স্মরণ করেই পালিত হয় শিশু দিবস (Children’s Day)। আজকের দিনে শিশুদের চকোলেট থেকে শুরু কর নানা রকমের উপহার দেওয়া হয়। তাছাড়া স্কুলে স্কুলে নানা ধরনের অনুষ্ঠানও করা হয়। পাশাপাশি অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টাও হয়ে থাকে।
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু শিশুদের কাছে ছিলেন প্রিয় “চাচা নেহেরু”। অন্যদিকে জওহরলাল নেহরুও ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভালোবাসতেন। জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ ১৯৫৪ সালের ২০ নভেম্বর দিনটিকে শিশু দিবস হিসাবে পালনের জন্যে ঘোষণা করেছিল। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ভারতেও ২০ নভেম্বর শিশু দিবস হিসাবে পালন করা হত। তবে ১৯৬৪ সালের ২৭ মে,পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর প্রয়াণের পর শিশুদের প্রতি তাঁর চরিত্রের এই বিশেষ দিকটিকে স্মরণে রেখে সর্বসম্মতভাবে তাঁর জন্মদিনটি ভারতে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর থেকেই প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর দিনটি শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে শিশুদের গুরুত্বকে মনে করেই এই দিনটি পালিত হয়। এছাড়াও,এই দিনে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সব মানুষকে আরও সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। শিশুরা যাতে সঠিক শিক্ষা পায়, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা পায় সে ব্যাপারেও প্রচার করা হয় এই দিনটিকে উপলক্ষ করে। পাশাপাশি শিশুদের সঠিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরা হয়।
দেশের স্কুলগুলিতে এই দিনটিতে পড়াশুনোর পরিবর্তে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোথাও আবার শিশুদের পিকনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কচি বাচ্চাদের হাতে এই দিনটিতে তুলে দেওয়া হয় নানা উপহারও। সব মিলিয়ে ভারতে১৪ নভেম্বর (Children’s Day) পুরোপুরিই শিশুদের দিন। তবে সব দেশেই শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য একটাই, দেশের শিশুদের অধিকার ও তাঁদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতনতার বার্তা দেওয়া।
তবে ১৯৬৩ সালের আগে পর্যন্ত প্রতি বছর নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ পালিত হত শিশু দিবস (Children’s Day)। শুধু ভারত নয় বিশ্বের অন্য দেশেও ওই তারিখটি পালনের কথা ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ। কিন্তু ওই বছর নেহরুর মৃত্যুর পর থেকে সর্বসম্মতিতে দিন বদল হয়। শিশুদের শুধু ভালবাসা নয়, যথাযাথ ভাবে বড় করার ব্যাপারেও জোর দিয়েছেন নেহরু। আর তাই একবার তিনি বলেছিলেন, আজ আমরা যেভাবে শিশুদের বড় করব, কাল সেভাবেই তারা দেশ চালাবে।
আর এই ভাবনা থেকেই দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পথ চলা শুরু হয় নেহরুর সময়। একই ভাবে ভাল চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে আইএমএস-এর সূচনা করেন নেহরু। আইআইটিও তাঁরই উর্বর মস্তিস্কের ফসল। তাছাড়া ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট তৈরির সিদ্ধান্তও তাঁর। তাই স্বাধীনতা সংগ্রাম বা প্রধানমন্ত্রিত্বের বাইরে গিয়ে শিশুদের জন্য তাঁর অবদানকে মনে রেখেই পালিত হয় শিশু দিবস।
।।সংগৃহীত : উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।