বাংলাদেশের বিজয় দিবস ও ভারতের ভূমিকা – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

0
43

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস এবং প্রতিবছর বাংলাদেশে পালিত হয়। এই দিবসটি বাঙালি জাতির কাছে একটি বিজয়ের দিন, আনন্দের দিন ও গৌরবের দিন। কেননা দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো বাঙালিরা। এই দিন বাঙালিরা বিজয় লাভ করে ছিল বিধায় ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ, গণমাধ্যম ইত্যাদিতে বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়। এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে, এছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ,বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। এই দিনে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়। নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। এই দিনটির পিছনে রয়েছে ন’মাস ধরে রক্তপাত করে যাওয়া লাখ লাখ যোদ্ধা। এবং ছিল স্যাম মানেকশয়ের একটি হুঁশিয়ারি। ‘নয় তোমরা আত্মসমর্পণ করো নয়তো তোমাদের মুছে ফেলব’, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর, পাকিস্তানকে এই বার্তা দিয়েছিলেন ফিল্ড মার্শাল স্যাম মার্শাল। এরপরই পাকিস্তানের একে নিয়াজি তার অধীনে থাকা ৯৩ হাজার সেনাকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

দিনটা ছিল ১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি। বাংলাদেশ তখনও স্বাধীন হয়নি। পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেয় দিল্লি। মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাশ করেননি স্যাম মানেকশ। ১৩ দিনের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার অন্যতম নেপথ্য নায়ক ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭২ সালে পদ্মবিভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন স্যাম মানেকশ। সেনাবাহিনীর প্রতি এই অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারি তাঁকে ফিল্ড মার্শালের পদে উন্নীত করা হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৩১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেস কোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী সই করেন। আত্মসমর্পণের দলিলের নাম ছিল “INSTRUMENT OF SURRENDER”। এই ঘটনাকে ঢাকার পতন বলেও ডাকা হয়।যে টেবিলে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা ঢাকা ক্লাব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই টেবিলটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ৩৭ সংখ্যক প্রদর্শনী কক্ষে সংরক্ষিত আছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলাদেশ (পরবর্তীকালে একটি শব্দ হিসাবে ব্যবহার শুরু করা হয়) নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সকল দেশ স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here