বিরল রোগের অস্ত্রোপচারে প্রাণ ফিরে পেলো গৃহবধূ,খুশি চিকিৎসকরা।

পূর্ব মেদিনীপুর , নিজস্ব সংবাদদাতাঃ – পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক মেডিক্যাল কলেজে সিএসএফ রাইনোরিয়া নামে বিরল রোগের সফল অস্ত্রোপচারে প্রাণ বাঁচল এক গৃহবধূর। চিকিৎসকদের কথায়, ওই মহিলার নাক দিয়ে এক রকম ফ্লুইড বেরিয়ে আসছিল সেটা আসলে সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড অর্থাৎ মাথার ঘিলুর খানিকটা অংশের রস! যা কিনা আগামী সময়ে বড় রকমের বিপত্তি তৈরি হত। গত শনিবার প্রায় আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচার হয় ওই গৃহবধূর। অস্ত্রোপচারে সাফল্য আসায় আশার আলো দেখছেন জেলার চিকিৎসকরা। খুশি রোগীর আত্মীয় পরিজনেরাও। উল্লেখ্য, জেলা সদর শহর তমলুকের পাশাপাশি বিভিন্ন মহকুমা এলাকায় গজিয়ে উঠেছে একের পর এক নার্সিংহোম থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্তু তারপরেও রোগীর পরিষেবা দেওয়া নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। চিকিৎসার গাফিলতিতেও মৃত্যুর ঘটনাও কম কিছু নয়। পরিস্থিতি এমনই যে, নিজেদের সুরক্ষায় প্রাণ বাঁচাতে জেলা ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা ক্রমশই বাড় ছিল। সাম্প্রতিক ওড়িশার জাজপুরে বাস দুর্ঘটনায় এমন অভিযোগ আরও একবার সামনে আসে। ফুটে উঠে জেলা তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার কঙ্কাল সার চিত্র। এমন পরিস্থিতিতে মেগা শহর ছাড়িয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মতো প্রত্যন্ত জেলায় একাধিক জটিল অস্ত্রপোচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় কিছুটা হলেও যেন আশার আলো দেখছেন বিভিন্ন মহল।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুকের রাজনগর জেলা এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ দিপালী বর্মন, যার বয়স আনুমানিক ৪৭ বছর। স্বামী সুকুমার বর্মনের সঙ্গেই মাছের ব্যবসা করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। বর্তমানে দুই ছেলে
মেয়েরই বিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। বছর তিনেক আগে অসহ্য মাথার যন্ত্রণা শুরু হয় দিপালী দেবীর। আর তাতেই সেই মাছের ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠে। এদিক ওদিক ঘুরে শেষে তমলুক মেডিক্যাল কলেজে এসে হাজির হন দিপালী দেবী। তাঁর দাবি, মাস ছয় আগে থেকেই নাক দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়েছিল। সেই সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তাতেই সামনে আসে সিএসএফ রাইনোরিয়া নামে এক বিরল রোগ ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো মেডিক্যাল কলেজেই শুরু হয় ওই মহিলার সফল অস্ত্রোপচারের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা।গত শনিবার প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় নাকের ভিতর দিয়ে নল ঢুকিয়ে এনডোস্কপির মাধ্যমে মাথার খুলির ফুটো হয়ে যাওয়া অংশে অস্ত্রোপচার হয়। মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার ডা. সৌমিক সাহার নেতৃত্বে প্রায় চার সদস্যের চিকিৎসকদের একটি দল ওই মহিলার পায়ের একটি অংশের মাংসপিণ্ড কেটে তা অস্ত্রোপচার করতে সফল হয়েছেন বলে দাবি। বর্তমানে ওই মহিলার শারীরিক অবস্থাও অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইএনটি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. সৌমিক সাহা। তিনি বলেন, “এই ধরনের জটিল অস্ত্রপোচার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তথা মেডিকেল কলেজে এই প্রথম।” স্বামী সুকুমার বর্মন বলেন, “স্ত্রী সুস্থ হতে পেরেছে আমারও ভীষণ ভালো লাগছে।” মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল শর্মিষ্ঠা মল্লিক জানান, “মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি রোগীদের পরিষেবা প্রদানে আমরা যথেষ্টই সফল। আগামি দিনেও যাতে তা সম্ভব হয় সেই চেষ্টাই করব।”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *