স্মরণে কিংবদন্তী অভিনেতা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়।

0
220

নিজের জাত চিনিয়েছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। অনবদ্য অভিনয়ে চমক লাগিয়ে দেওয়া কালজয়ী অভিনেতার নাম সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ হিসেব ছিলেন নিতান্তই সাদামাটা,  সদা হাস্যময়। তিনি  ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রঙ্গমঞ্চ ও চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্ট অভিনেতা। তিনি তিনশো নাটকে অভিনয় করেছেন।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন—

সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে সেপ্টেম্বর বিহারের পাটনায়। পিতা অতুলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা অমিয়া দেবী। তার স্কুল জীবনের পড়াশোনা উত্তর প্রদেশের  লখনউ-এ। সেখানকার অ্যাংলো-বেঙ্গলী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ পর কলকাতায় আসেন। আশুতোষ কলেজ থেকে অনার্স নিয়ে বি. এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজীতে এম.এ পাশ করেন।তিনি জার্মান ভাষায়ও বেশ পারদর্শী ছিলেন।  কিন্তু তার পড়াশুনা শেষ হয়নি।  অভিনয় ছাড়া তার পেশাগত জীবনে তিনি ভারত সরকারের টেলি কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাকাউন্টস বিভাগে কাজ করতেন।

কর্মজীবন—-

তিনি ছিলেন আপাদমস্তক শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং বই পাগল মানুষ।  ছিলেন সত্যের পূজারী এবং নিপাট ভদ্রলোক।  কাজের প্রতি ছিলেন একনিষ্ঠ ও নিয়মানুবর্তিতা।  থিয়েটার দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হলেও বড় পর্দাতেও তাঁর ছিল অনায়াস বিতরন।  সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে রুপোলি পর্দায় আগমন ‘জন অরণ্য’ ছবি দিয়ে।  এরপর তিনি তরুণ মজুমদার, মৃণাল সেন সহ বহু পরিচালকের পরিচালনায় একের পর এক কাজ করে গিয়েছেন। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে অভিনয় জীবন শুরু করেন উৎপল দত্তের লিটিল থিয়েটার গ্রুপে পরবর্তীতে যেটি পিপলস্ থিয়েটার গ্রুপে পরিবর্তিত হয়। তিনি উৎপল দত্তের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।তিনি উৎপল দত্তের কাছে অভিনয় শিখেছেন।  তিনিই মহান শিল্পী রবি ঘোষকে উৎপল দত্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।  লিটল থিয়েটার গ্রুপের প্রায় নাটকে অংশ নেন।  তিনি নাটকের স্ক্রিপ্ট এবং থিয়েটারের জটিলতার উপর কিছু প্রবন্ধও লিখেছেন।  উলকা (১৯৫৭), বালিকা বোধু (১৯৬৭), সেশ থেকে শুরু (১৯৬৯), কুহেলি (১৯৭১), জন অরণ্য (১৯৭৬) দাদার কীর্তি (১৯৮০), বউমা (১৯৮৬) তার কিছু স্মরণীয় চলচ্চিত্র।  ১৯৭৬ সালে, তিনি “একদিন প্রতিদিন” ছবিতে অভিনয়ের জন্য B.F.J.A এবং পশ্চিমবঙ্গ সিনে পুরস্কার পান।  এছাড়াও তিনি ১৯৯৬ সালে সঙ্গীত নাট্যক একাডেমীতে পুরস্কৃত হন।  তিনি পিপলস্ থিয়েটার গ্রুপের ‘কল্লোল’, ‘অঙ্গার’, ‘নীচের মহল’ , মহাবিদ্রোহ এবং তিতুমীর সহ ১৫০ টি নাটকে মুখ্যভূমিকায় অভিনয় করেন।  ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানির ‘বার্লিনার এনসেম্বল’-এ প্রশিক্ষণ নেন। তিনি বাংলা ও ইংরাজী নিয়ে প্রায় চল্লিশটি নাটক পরিচালনা করেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য নাটকের তালিকা-

বাজি (আন্তন চেখভের ছোটগল্প অবলম্বনে উৎপল দত্তের প্রযোজনা ও পরিচালনায়)

ফোর্টিনথ অফ জুলাই (উৎপল দত্তের প্রযোজনা)

দাঁতোঁ (উৎপল দত্তের প্রযোজনা)

লেলিনের ডাক (উৎপল দত্তের রচনা ও পরিচালনা)

অন্যান্য নাটক ও চরিত্র হল –

টোটো, বিকাশ, টিনের তলোয়ার,  সূর্যশেখর, ব্যারিকেড, একলা চলো রে।

তিনি সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেন পরিচালিত কিছু ছবিতে অভিনয়ও করেছেন।  তার উল্লেখযোগ্য ছায়াছবিগুলি হল – মৃণাল সেনের’ ‘একদিন প্রতিদিন’ ১৯৮০) এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ (১৯৭৯)

পুরস্কার——-‐-

সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় রঙ্গমঞ্চ ও ছায়াছবিতে অভিনয়ের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

(ক) ১৯৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি পুরস্কার,

(খ) ১৯৮৯ সালে ঋত্বিক ঘটক পুরস্কার,

(গ) সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ১৯৯৬,

(ঘ) বিএফজেএ পুরস্কার,

(ঙ) “একদিন প্রতিদিন” ছবিতে অভিনয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সিনেমা পুরস্কার।

৩০ জানুয়ারি ২০০৬ সালে তিনি প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here